পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৯৬

 রকীব সাহেব তো তার দীর্ঘ নিবন্ধে কোথাও এ কথা লেখেননি যে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে তাকে নিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানীরা কি ব্যবস্থা নিয়েছিল? তিনি তো একথা লেখেননি যে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে আবার পাঞ্জাব ব্যাটালিয়নের কমাণ্ড দেয়া হয়েছিল। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার, লেঃ কর্নেল মাসুদ,লেঃ কর্নেল জলিল, লেঃ কর্নেল ইয়াসিন আরও অনেককেই তো কমাণ্ড থেকে অপসারিত করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারা তো কেউ তাদের কমাণ্ড আর ফিরে পাননি। উপরন্তু যাদের উপর যে অমানুষিক ও পৈশাচিক অত্যাচার চালান হয়েছিল তার চিহ্ন তো আজও তাদের অনেকের শরীরে রয়ে গেছে।

 লেঃ কর্নেল রকীবের উপর আমার ব্যক্তিগত কোন ক্ষোভ বা বিদ্বেষ নেই। কিন্তু তার নিবন্ধের উপর কিছু আলোকপাত করতে গিয়ে আমাকে যেসব কথা লিখতে হল সেজন্য আমি দুঃখিত। একবার ভেবেছিলাম যে এ নিবন্ধের উপর কোন মন্তব্য করব না, করা উচিত নয় কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম যে প্রতিবাদ না করলে অসত্য সত্য হয়ে থাকবে। তাই আমাকে লিখতে হল।

জয়দেবপুর-তেলিয়াপাড়ার প্রতিরোধ যুদ্ধ

সাক্ষাৎকারঃ ক্যাপ্টেন গোলাম হেলাল মোরশেদ খান[১]

 ২৫ শে মার্চ সকালে ঢাকা ক্যাণ্টমেণ্ট এবং টঙ্গী টেলিফোনে এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং খবরাখবর নিই। জয়দেবপুরের জনসাধারন তখন দারুণভাবে উত্তেজিত। তারা টেলিফোনে আমাদের যুদ্ধে অংশগ্রহন করার জন্য দারুণভাবে চাপ দিতে থাকে। দুপুর বারটার সময় টঙ্গী টেলিফোনে এক্সচেজ্ঞের মাধ্যমে জানতে পারি যে, পাঞ্জাবী কমাণ্ডো ব্যাটালিয়নের কিছু সাধারণ পোশাকধারী সৈন্য টঙ্গী ব্রীজ দখল করে জনসাধারণের উপর গোলাগুলি চালাচ্ছে। তখন আমরা বুঝতে পারি এবং দখল করে জনসাধারণের উপর গোলাগুলি চালাচ্ছে। তখন আমরা বুঝতে পারি এবং ধারণা করি যে পরবর্তী আক্রমণ হয়তবা আমাদের উপর করবে।

 রাত্রে আমরা পাজ্ঞাবীদের দ্বারা আক্রান্ত হবো মনে করে জয়দেবপুর প্যালেসের চতুর্দিক পরিখা খনন করে পাহারা দিই। আমি কর্তব্যরত থাকাবস্থায় রাত প্রায় সাড়ে বারোটার সময় ঢাকা থেকে টেলিফোন গেল এবং সে টেলিফোন করেছিলেন লেফটেন্যাণ্ট জেনারেল টিক্কা খান স্বয়ং। তিনি আমার অফিসার কমাণ্ডিং লেঃ কঃ রকীবকে ডাকতে বলেন। আমি লেঃ কঃ রকীবের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করি এবং লেঃ জেঃ টিক্কা খানের টেলিফোনের কথা জানাই। লেঃ কর্নেল রকীব অফিসে আসবার পূর্বেই পুনরায় টিক্কা খানের এডিসি টেলিফোনে করেন। তিনি আমার কাছে জয়দেবপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীর খবর জানতে চান। অর্থাৎ জয়দেবপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরী জনসাধারণ আক্রমণ করে অস্ত্রশস্ত্র নিতে পারে। কাজেই তাকে রক্ষা করার জন্য আমরা কিরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি সে কথা জানতে চান। তার জবাবে আমি বললাম যে জয়দেবপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীর খবর পুরাপুরি জানি না। তবে আমাদের সঙ্গে দু'টি অয়ারলেস সেট আছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতির কথা জানাব। এমন সময় লেঃ কর্নেল রকীব আমার অফিসে চলে আসেন এবং আমি তাঁকে টিক্কা খান ও তার এডিসির টেলিফোনের কথা জানালাম। তিনি তখন আমাকে একজন অফিসারের নেতৃত্বে এক প্লাটুন সৈন্য জয়দেবপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীতে পাঠাতে বলেন এবং অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীতে খবর দিতে বলেন। আমি তার নির্দেশমত কাজ করলাম। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন অফিসার আমার ডিউটি কক্ষে আসলেন। তাঁদের সঙ্গে সারারাত পরিস্থিতির উপর আলোচনা হয়।

 ২৫শে মার্চ সকাল আটটায় রেডিওতে সামরিক আইনের ঘোষণা শুনি। এর পর থেকে আমরা সবাই অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়ি এবং কি করতে পারি সে বিষয়ে আলোচনা করি। এবং শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম

যে


  1. ১৯৭১ সালের মার্চে ২য় বেঙ্গল রেজিমেণ্টে লেফটেন্যাণ্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। বাংলা একাডেমী দলিলপত্র থেকে সংকলিত সাক্ষাৎকারটি ১৯৭৩ সালে গৃহীত।