পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



২৮৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: নবম খণ্ড

 মেজর আখতার রিয়ারে ও-সি হিসাবে রিয়ারে রয়ে গিয়েছিলেন। সে তার বাসায় টেলিফোন বসিয়েছিল। এমনকি গোপন আয়ারলেস-এর সাহায্যে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী ইউনিট-এর খবরাখবর এবং যোগাযোগ রাখত। সে অনেক সময় কমাণ্ডিং অফিসারের নির্দেশ পালন করত না। আমরা এ সমস্ত খবরাখবর মেজর আখতারের উপস্থিতিতে আমাদের সি-ওকে জানালাম। এ সমস্ত কার্যকলাপের কথা শুনে সি-ও-আর ঘোড়াঘাটে গেলেন না। তিনি ইউনিটে রয়ে গেলেন। তিনি আমাদেরকে সব সময় সাতুনা দিতেন এবং আমাদের উপর কোন হামলা হবে না আশ্বাস দিতেন।

 রংপুরের ব্রিগেড কমাণ্ডার আমাদের সি-ওকে ঠাকুরগাঁ, বগুড়া, দিনাজপুর এবং পার্বতীপুরে যে সমস্ত সৈন্য আটকা পড়ে আছে তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য বলেন।

 ৩১শে মার্চ বেলা সাড়ে বারটার দিকে রংপুর থেকে ব্রিগেড কমাণ্ডার সি-ওকে টেলিফোনে ডাকেন। তিনি ব্রিগেড কমাণ্ডারের সাথে কথা বলেন এবং দু’টার সময় অফিসে আসেন। সুবেদার মেজর হারিস মিয়াকে তিনি ডেকে পাঠান এবং তাঁরা রুদ্ধদ্বার কক্ষে আলোচনা করেন। বের হয়ে সকলের উদ্দেশ্যে তিনি এক ভাষণ দেন, ‘হাজেরানে অফিসার, সরদার আওর জোয়ানো, আপ সবকে লিয়ে ম্যায় এক খোশখবর লে আয়া হু। ওয়হ ইয়ে হ্যায় কে কোর কমাণ্ডার, জিওসি আওর ব্রিগেড কমাণ্ডার কি তরফছে আপ সবকো মোবারকবাদ হয়। ইস লিয়ে কে ইস ওয়াকত তক কিছি পলিটিকাল পাটিও নে হিসসা নিহি লিয়ে, আওর ম্যায় দাওয়া কে সাথ কাহ সেকতা কে থার্ড ব্যাটালিয়ন হর তরফছে পাকিস্তান সরকারকে ওফাদার রহেগী। ম্যায় আপসে ওয়াদা করতে হুঁ আপ বরদাস্ত করে আওর মুঝ পর ভরোসা রাক্ষে- উছ ওয়াকত তক আপকো কুয়ি কুছ নেহি বোলেগা যব তক মুঝ পর কুইভি কুছ না বোলে। তারপর তিনি এ্যাডজুট্যাণ্ট লেফটেন্যাণ্ট সিরাজুল ইসলাম এবং তিনজন এনসিও ও ৩০ জন সিপাই সাথে নিয়ে রংপুর রওনা হয়ে যান, এবং সেখান থেকে তিনি বগুড়া যান ২৬ এফ এফ এবং ২৩ ফিল্ড রেজিমেণ্ট আটিলারী সৈন্যদের ফিরিয়ে আনার জন্য-যারা বগুড়াতে ইপিআরদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছিল।

 সেদিনই বেলা সাড়ে চারটার সময় ২৬ এফ-এফ এবং ফিল্ড রেজিমেণ্ট (আর্টিলার) ৬৪টা কনভয় নিয়ে ঘোড়াঘাটের দিকে যায়। সেখানে ৩য় বেঙ্গলের দুটো কোম্পানী ছিল। তারা তাদের উপর অতর্কিতে ভীষণভাবে গোলাগুলি ছুড়তে থাকে। অনন্যোপায় হয়ে বেঙ্গল রেজিমেণ্টের লোকেরা ছোট অস্ত্র দিয়ে প্রত্যুত্তর দেয়। ঘটনাস্থলে ওদের ১৩ জন নিহত হয়। গ্যারিসন কমাণ্ডার লেফটেন্যাণ্ট কর্নেল কোরেশী এবং আরো কয়েকজন সাদা পতাকা উত্তোলন করে বরং অস্ত্র সমর্পণ করে এবং বলে যে তারা মনে করেছিল এখানে ইপিআর-এর লোকজন আছে। তারা মেজর নিজামের সাথে আলাপ করল। মেজর নিজাম তাদেরকে চা পানে আপ্যায়িত করেন। লেফটেন্যাণ্ট রফিক তাদেরকে এগিয়ে দিয়ে যায়। যখন লেঃ রফিক কোরেশীর সাথে করমর্দন করছিল তখন কোরেশী তাকে তাঁর জীপে উঠিয়ে নেয় এবং দ্রুত চলে যায়। সাথে সাথে এলএমজি থেকে কয়েক রাউণ্ড গোলা বষর্ণ করা হয় এবং আমাদের তিনজন খেলোয়াড় ঘটনাস্থলে মারা যায়।

 আমাদের কমাণ্ডিং অফিসার যখন রংপুর থেকে ৩০ মাইল দূরে পলাশবাড়ীর নিকটে আসেন তখন তিনি কোরেশীর কনভয়গুলো দেখতে পান। তারা সি-ওর জীপ এবং অন্য দুটো ডজ গাড়ী থামায় এবং কমাণ্ডিং অফিসারসহ সমস্ত বাঙ্গালী সৈনিককে গাড়ী থেকে নামানো হয় এবং নিরস্ত্র করা হয়। বংগশার্দুলদের তিনটা গাড়ী তাদের কনভয়-এর মাঝখানে রেখে তারা রংপুরের দিকে চলে যান। এই সময় লেঃ রফিক লেঃ সিরাজুল ইসলামের সাথে আলাপ করতে সমর্থ হয়। লেঃ রফিক লেঃ সিরাজুল ইসলামকে কানে কানে ঘোড়াঘাটের ঘটনা বলে।

 কনভয়গুলো রংপুরে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে রাত ৮টার সময় পৌছে এবং কর্নেল কোরেশী ব্রিগেড কমাণ্ডারের সাথে আলাপ করে। কিছুক্ষণ পর আবার কনভয়গুলো সৈয়দপুরের দিকে রওয়ানা হয়। সৈয়দপুরের