পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩০৫

যান। আমরা সৈয়দপুরের দিকে অগ্রসর হতে বীরগঞ্জে উপস্থিত হলে ক্যাপ্টেন আশরাফের সাথে সাক্ষাৎ হয়। সুবেদার হাফিজ এবং ক্যাপ্টেন আশরাফ আলোচনা করেন। সৈয়দপুরের পথে ভূষিরবন্দর পুলের পাশে পৌঁছাই। পুলের বাম পাশে সৈয়দপুর- দিনাজপুর রাস্তায় আমরা এবং ডান পাশে ক্যাপ্টেন আশরাফ তার কোম্পানী নিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যূহ রচনা করলেন।

 ৫ই এপ্রিল পাকবাহিনী ১১টি গাড়ী নিয়ে আমাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ৩য় বেঙ্গল প্রথমে মেশিনগানের গুলি ছোঁড়ে। পাকসেনারা সামনে অগ্রসর না হয়ে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়।

 ৫ই এপ্রিল তারিখে আমরা আরও ৬ মাইল সামনে চম্পাতলী নামক স্থানে যাই এবং রাতের মধ্যে ডিফেন্স নিই।

 ৬ই এপ্রিল পাকসেনারা সেনানিবাস থেকে দিনাজপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। আমাদের রাইফেলের আয়ত্তের মধ্যে আসলে আরম্ভ করি। দুই- তিন ঘণ্টা উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ চলে। পাকসেনারা ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে সেনানিবাসে চলে যায়।

 ঐ তারিখেই বেলা আড়াইটা- তিনটার দিকে পাকসেনারা একটি ট্যাঙ্ক নিয়ে আমাদের দিকে অগ্রসর হয়। আমরা তখন সৈয়দপুর থেকে দুই মাইলের ভিতর। যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পাকবাহিনীর আক্রমণে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই এবং বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পিছু হটতে থাকি। বামদিকে নীলফামারীর দিকে পিছু হটি। ৩য় বেঙ্গল এখান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

 পাকসেনারা অগ্রসর হতে থাকে। বাড়ীঘরে সব আগুন লাগাতে থাকে। সুবেদার হাফিজ আমাদের নিয়ে রাত ১১টায় দারয়ানী স্টেশনের পশ্চিম পাশে এক গ্রামে আকবর আলী চেয়ারম্যানের বাড়ীতে আশ্রয় নেন। আমরা তখন ৭০/৮০ জন ছিলাম। সেই রাতে আকবর আলী সকলের খাবারের ব্যবস্থা করেন। রাতে ওখানে থাকি।

 ৭ই এপ্রিল আমরা খানসামা নামক স্থানে গেলাম। সেখানে থেকে খবর পেলাম নীলফামারীর ৮নং শাখার যে কোম্পানী ছিল তারা পাকবাহিনী কবজায় চলে যায়। খানসামাতে নদীর পাড়ে আমাদের ৯নং উইং- এর একটি প্লাটুন আগে থেকেই ডিফেন্সে ছিল। আমরা এই প্লাটুনের সাথে একত্রিত হই। প্লাটুনকে রেখে আমরা বীরগঞ্জে চলে আসি। সেখানে ৮ নং শাখার সুবেদার মেজর রব সাহেবের নির্দেশক্রমে খানসামাতে আমরা ডিফেন্স নিই এবং খানসামাতে অবস্থানরত দশমাইল স্ট্রং ডিফেন্স পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

 ১০ই এপ্রিল পাকসেনারা দশ মাইল ডিফেন্সের উপর আক্রমণ করে। দশ মাইলে আমাদের বাহিনী টিকতে ব্যর্থ হয। সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। পাকসেনারা ভাতগাঁও নামক স্থানে আস। ভাতগাঁওতে আমাদের ডিফেন্সের পতন ঘটে।

 ১০ই এপ্রিল রাতে আমরা খানসামা ছেড়ে দেবীগঞ্জ পৌঁছাই। ১১ই এপ্রিল সেখানে আমাদের উইং- এর একটি কোম্পানী ও একটি প্লাটুন ছিল। আমরা দেবীগঞ্জ পথের পাশে ডিফেন্স নিলাম। ঠাকুরগাঁও থেকে খবর পেয়ে আমরা ১৩ই এপ্রিল ঠাকুরগাঁ পৌঁছাই। সেখান থেকে আমরা বীরগঞ্জ পৌঁছাই।

১৩ই এপ্রিল তারিখের খানসামাতে পাকবাহিনীর সামনেই আমরা প্রতিরক্ষা ব্যূহ রচনা করি। রাত ৩টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ফায়ারিং চলে। সকাল ৮টায় আমরা পাকবাহিনীর মেশিনগানের অবস্থান জানতে পারি। আমি ২” মর্টার দিয়ে মেশিনগানের উপর গোলা ছুড়তে থাকি। পাকবাহিনী বহু ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পালাতে থাকে। বহু পাকসেনা এখানে নিহত হয়। এখানে আমরা পাকবাহিনীর ঘাঁটি দখল করে নিই। দুই ট্রাকভর্তি পাকবাহিনীর মালামাল উদ্ধার করি।