পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৮৭

ওরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন-আরও গুলিগোলা চাই

(রাজনৈতিক সংবাদদাতা)

 দু’দিনের লড়াইয়ে গোটা পূর্ব পাকিস্তানে প্রায় এক লক্ষ লোক মারা গিয়েছেন বলে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে ভারত সরকারের দফতরগুলিতে খবর পৌঁছেছে। বিভিন্ন সীমান্ত ঘাঁটি থেকে যেসব খবর আসছে তার সারমর্মঃ মুজিবর রহমানের সমর্থক পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীর লোকজনদের গুলি ফুরিয়ে এলেও তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সেনাবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে।

 লড়াই এখনও সবচেয়ে বেশি চলছে ঢাকা এবং রংপুরে। এই দুই এলাকায় হাজার হাজার সাধারণ মানুষও সেনাদের বিরুদ্ধে গেরিলা কায়দায় লড়াই চালাচ্ছেন। পাক সেনাবাহিনী ও এই দুই এলাকায় ট্যাঙ্ক নিয়ে নেমেছে। তারাও ট্যাঙ্ক থেকে অবিরাম গুলি চালাচ্ছে।

 পূর্ব পাকিস্তানের দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপরের কয়েকটি ব্রিজও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা উড়িয়ে দিয়েছেন। এই দুটি সড়কই ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম এবং যশোরের যোগাযোগ রক্ষা করত। এই দুটি সড়ক দিয়ে এইদিন সেনাবাহিনীর গাড়ি এগোতে পারেনি। এছাড়া মুজিবর রহমানের সমর্থকরা বিভিন্ন রাস্তায় সৈন্যদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করার জন্য নানারকমের প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছেন। বহু এলাকায় রাস্তা খুঁড়ে দেওয়া হয়েছে।

 শনিবার সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় ওপারের লোকেরা এসে এপারে গুলি চেয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন যে তাঁদের গুলি ফুরিয়ে যাচ্ছে। গুলিগোলা না পেলে আর লড়াই চালাতে পারছেন না। কিন্তু তাদের সবাইকেই এপার থেকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। কুষ্টিয়া অঞ্চল থেকে একজন এসডিও-ও গুলি চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮শে মার্চ, ১৯৭১

আওয়ামী লীগের নেতারা এপারে

তাঁদের আবেদনঃ অস্ত্র চাই

 আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা সোমবার ওপার থেকে এপার এসেছেন। সকলেরই একই লক্ষ্য-ভারত থেকে অস্ত্র সাহায্য সংগ্রহ করা। এদের মধ্যে একজন আছেন নবনির্বাচিত পাক জাতীয় পরিষদের সদস্য। তিনি মালদহ জেলা সীমান্ত দিয়ে ঢুকেছেন।

 এদিকে, মুক্ত কুষ্টিয়ায় এইদিন পূর্ণ কর্তৃত্ব হাতে নিয়েই আওয়ামী লীগের শাসকরা ট্রাঙ্ক টেলিফোনে ব্যবস্থা চালু করে দিয়েছেন। সোমবার দুপুরেই মুক্ত কুষ্টিয়ার প্রধান পরিচালক ডাঃ আসাবুল হক টেলিফোনে শ্রী অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরও আবেদন ছিলঃ আপনারা অবিলম্বে সাহায্য পাঠান।

 ডাঃ হক জানান, এখন কার্যত হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষ সৈন্যদের আক্রমন করছে। এত মানুষ এসে লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছে যে, সেনাবাহিনী মেশিনগান চালিয়েও মেরে শেষ করতে পারছে না। তিনি জানান, কুষ্টিয়া, পাবনা, যশোর, খুলনায় এইদিন হাজার হাজার মানুষ বল্লম ও সড়কি নিয়ে এসে সেনাবাহিনী ঘাঁটি আক্রমন করেছে। হাজার হাজার মেরেছেও। কিন্তু তাঁরা পিছিয়ে যাননি। তিনি জানান, সোমবার রাত্রিতেই বৃহত্তম আঘাত হানা হবে ঘাঁটিগুলির উপর।

 কুষ্টিয়া মিলিটারী ব্যারাককে চতুর্দিক দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। সৈন্যদের বলা হয়েছে আত্মসমর্পন করতে। ডাঃ হক জানান, পাবনায় ও সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা করেনি। ফলে তাদের