পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪২৮

 মুক্তিফৌজের একদল কমাণ্ডো ১২ মে রাতে কুষ্টিয়া জেলায় মেহেরপুর থেকে ৩ মাইল দূরে কালাচাঁদপুরে রাস্তার ওপর একটি বড় কালভার্ট উড়িয়ে দেন।

 এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের উঃ পঃ সীমান্ত প্রদেশ থেকে আধা-সামরিক বাহিনীর লোকদের এনে পাকবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর একটি ব্যাটালিয়ানকে মোতায়েন করা হয়েছে। মেহেরপুর সীমান্তের পশ্চিম দিকে দৌলতদারের গ্রামে এবং চুয়াডাঙ্গা শহরে পাকসৈন্যদের একটি বিরাট দল ঘাঁটি স্থাপন করেছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে ৬০ টি ট্রাক।

 চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে পাকসেনাদের নৃশংসতাঃ কৃষ্ণনগরে আগত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছন, পাক টহলদার বাহিনী রোজ মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে ওঁৎ পেতে থাকে। তারা বেপরোয়াভবে নিরস্ত্র লোকদের হত্যা করে মৃতদেহগুলি গর্তে ফেলে দেয়। পাকসেনারা চুয়াডাঙ্গা মহকুমার দুটি গ্রাম বাদে আর মব এলাকা তছনছ করে দিয়েছে। ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং নারী নির্যামন তাদের দৈনন্দিন কাজ। পাকস্তানী বর্বররা বহু তরুণীকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। মেহেরপুরে দুটি গ্রামে হানা দিয়া পাক সেনারা ১২ জনকে হত্যা করেছে। প্রকাশ, মুক্তিফৌজ বিভিন্ন অঞ্চলে এর আগে যেসব পরিখা খুঁড়েছিলেন, নিহত ব্যক্তিদের মৃতদেহ ফেলে পাকসেনারা সেগুলি ভরে তুলছ।

 তামাবিল হাতছাড়াঃ ডাওকি থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়- তিনদিন প্রবল প্রতিরোধের পর মুক্তিফৌজ আজ তামাবিল থেকে হটে গিয়েছে। তামাবিল এখন পাকবাহিনীর দখলে। তামাবিল শ্রীহট্ট খণ্ডে বাংলাদেশের শেষ চেকপোষ্ট এবং ডাওবি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে।

 আজ বেলা দেড়টা নাগাদ মুক্তিফৌজ সুবিধাজনক স্থানে সরে যান। পাকসেনারা তামাবিল দখলের পর বাংলাদেশের পতাকা ফেলে দিয়ে পাকিস্তানী পতাকা তোলে।

-আন্দবাজার পত্রিকা, ১৫ মে ১৯৭১

শুভপুর সেতুর দখল নিয়ে প্রচণ্ড লড়াই, দুশো পাক সৈন্য নিহত

 আগরতলা, ১৬ ই মে-দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার সংযোগরক্ষাকারী ফেনীর গুরুত্বপূর্ণ শুভপুর সেতুটির দখল নিয়ে মুক্তিফৌজের সঙ্গে লড়াইতে পাকবাহিনীর এক ব্রিগেড সৈন্যের অন্ততঃ দুশোজন প্রাণ হারিয়েছে। গত দুদিন ধরে এখানে প্রচণ্ড লড়াই চলছে।

 বিলম্ব প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ, গত ১৪ই মে মুক্তিফৌজের সঙ্গে ট্যাঙ্ক ও ভারী কামানের লড়াইয়ের পর পাকবাহননী এখানকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দখল করে। এই যুদ্ধে মুক্তিফৌজের ৩৮ জন মারা যান। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে মুক্তিফৌজ পাকবাহিনীর সৈন্যদের বিপুল সংখ্যায় খতম করেছ।

 রাজশাহী অঞ্চলে মুক্তিফৌজ তিনজন পাকিস্তানকে শেষ করেছে। বরিশালে মুক্তিফৌজ এক পাক শিবিরের উপর হঠাৎ ঝাপিয়ে পড়ে এবং একজন অফিসার ও পাঁচজন সৈন্যকে খতম করে।

 ১১টি রেলসেতু ধ্বংসঃ পাকবাহিনী যাতে এগুতে নাপারে সে জন্য মুক্তিফৌজ গত দু’দিনে রংপুরের কাকিনা অঞ্চলে ১১ টি রেলসেতু ধ্বংস করেছে।

-যুগান্তর, ১৭ মে ১৯৭১

কমাণ্ডোদের চোরাগোপ্তা আক্রমণে বহু পাকসৈন্য খতম

বহরমপুরে (পঃবঙ্গ), ১৭ মে (পি টি আই) গতকাল মুক্তিফৌজের কমাণ্ডোরা রাজশাহীতে আকস্মিকভাবে হানা দিয়ে অন্তত ২৫ পাকিস্তানী সামরিক শিক্ষার্থীকে খতম করেছে। আহত করেছে ৭০ জনকে। ওপার