পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৩৩

 মুক্তিফৌজ থেকে তাঁরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ও হাতবোমা সংগ্রহ করলেন। অদিতমারি ও লালমনিরহাটের মধ্যবর্তী রেল লাইনের একাংশকে তারা উড়িয়ে দিলেন। ঠিক সে সময় পাকসৈন্যবাহী একটি ট্রেন পুরো বেগে ঐ লাইনে যাচ্ছিল।

 ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয় এবং বহু পাকিস্তানী সৈন্য নিহত কিংবা আহত হয়। কিন্তু দু’জন কমাণ্ডোকে গুলী করে হত্যা করে।

 দু’জন সহকর্মীকে হারিয়ে বাকী তিনজন কমাণ্ডোর সংকল্প আরোও দৃঢ় হল। তাঁরা লালমনিরহাট বিমানঘাঁটির দিকে রওয়ানা হলেন। তাঁরা দেখলেন একটি পাকিস্তানী জেট বিমান নামছে। একজন হাল্কা মেশিনগান থেকে গুলি ছুড়লেন। বাকী দ’জন বিমানঘাটি লক্ষ করে বোমা নিক্ষপ করলেন। বিমানঘাঁটির বেশ ক্ষতি হয়েছে।

 এবারও তাঁরা প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারলেন না। পাকসৈন্যরা দ’জনকে গুলি করে মারল। আহত অবস্থায় আর একজন কোনও প্রকারে পালিয়ে একটি গ্রামে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। গ্রামের এক বৃদ্ধ আহতকে সেবা ও করেছিলেন, কিন্তু পরে তার মৃত্যু ঘটে।

-যুগান্তর, ২৫মে, ১৯৭১

খোদ ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর হামলাঃ এক সপ্তাহে

আরো ৬ শত শত্রুসৈন্য খতম

 গত এক সপ্তাহের সংগ্রামে মুক্তিবাহিনীর হাতে আরও ৬ শতাধিক শত্রুসৈন্য প্রাণ হারায়। মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ঢাকায় গভর্নর হাউস, দৈনিক পাকিস্তান, সেক্রেটারীয়েট ভবন ও নিউ মার্কেটের মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকে হাতবোমা দিয়ে আক্রমন চালায়।

 কুমিল্লা- চট্টগ্রামের সংযোগকারী শুভপুর সেতু দখলের জন্য মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে গত ১৪ ই ও ১৫ই মে-র লড়াইয়ে প্রায় দু’শ খানসেনা খতম হয়েছে। রাজশাহী শহরের কালীহাটায় পুলিশ লাইনে গেরিলারা দখলদার সৈন্যদের উপর হামলা চালায়। ১৬ই মে মুক্তিবহিনীর কমাণ্ডোরা বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে বিভিন্ন সৈন্য ঘাঁটিতে হামলা চলিয়ে ৬টি স্থল ও জলযান দখল করে নিয়েছে। এছাড়া একটা ট্রাক ধ্বংস করে প্রায় ৮০ জন সৈন্যকে খতম করা হয়। কুমিল্লা জেলার কসবায় মুক্তিফৌজ ৩টি পাকিস্তানী সামরিক ট্রাক দখল করে নেয়। এই হামলায় একজন ক্যাপ্টেনসহ ১৮ জন সৈন্য খতম করা হয়। উত্তরপশ্চিমে রংপুর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী রামনগর এলাকায় একটি পাক টহলদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে একজন মেজরসহ কয়েকজন পাকফৌজ হতাহত করে।

 মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রাম ও ঢাকার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। তাছাড়া সড়কের সেতুগুলোর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। গত ১৭ই মে দিনাজপুর জেলার হাতীডাঙ্গায় মুক্তিবহিনীর চোরাগোপ্তা আক্রমণে ক্যাপ্টেন পদতুল্য একজন অফিসারসহ ৩৫জন পাকসৈন্য নিহত হয়েছে। মুক্তিবাহিনী পূর্বাঞ্চল সেক্টরের আখাউড়ায় এক আকস্মিক হামলা চালিয়ে গত ১৯শে মে ও ২০শে মে ৪০ জন শত্রুসেনাকে খতম করেছে। এছাড়া ঐদিন কুষ্টিয়ার মেহেরপুর মহকুমার ব্রাহ্মণপাড়া ও জীবনগরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনার মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। মুক্তিবাহিনী দুটি সড়কের কালভার্ট উড়িয়ে দেয়। গত ১৯ শে মে কুষ্টিয়া জেলার কামদেবপুর গ্রামে ইছাখালী সীমান্ত ফাড়িটি দখল করে।

 গত ১৮ই মে মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডোরা দক্ষিণে রেলপথ উড়িয়ে দেয়। গেরিলারা যশোরের একটি রেলসেতু ধ্বংস এবং খুলনার একটি রেল ষ্টেশনের ক্ষতি সাধন করেছে। ময়মনসিংহ সেক্টরে মুক্তিবাহিনী তিলাকালীতে এক প্লাটুন পাক সৈন্যের ওপর হামলা চালায় এবং উক্ত এলকার একটি সেতু ধ্বংস করে। সিলেট