পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৫১

 প্রশ্নঃ আপনার পরিচালিত অধিকাংশ যুদ্ধগুলো চোরাগোপ্তা, না সম্মুখসমর?

 উঃ অধিকাংশ সম্মুখসমর। ব্যতিক্রম কেবল মাকড়াই-এর যুদ্ধ।

 প্রশ্নঃ যুদ্ধক্ষেত্রে ধৃত শত্রুদের ব্যাপারে আপনি সাধারণক কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন?

 উঃ যতক্ষণ হাতিয়ার থাকতো শত্রুর হাতে ততক্ষণই সে আমার বাধ্য। কিন্তু বন্দী ও আত্মসমর্পিত শত্রুর প্রতি আমার কোন দ্বেষ ছিলো না। তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হতো।

 প্রশ্নঃ স্যার, আপনি নিজে যে সমস্ত যুদ্ধ করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনটি এবং কেন?

 উঃ ধলাপাড়ার কাছে মাকড়াই-এর যুদ্ধ, ২১শে নভেম্বর বাঁশাইলের কামুটিয়ার নদীর ধারে সংঘটিত যুদ্ধ। মাকড়াই-এর দশ মিনিটের এই যুদ্ধ ৩৮ জন খান সেনাকে হত্যা করি। কামুটিয়ার খান সেনাদেরও পাকা বাংকার ধূলিসাৎ করে তাদের তিন মাইল দূরে তাড়িয়ে দিই।

 প্রশ্নঃ স্যার, যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর প্রতি আপনার কখনো অনুকম্পা হতো?

 উঃ হ্যাঁ, মাঝে-মধ্যে কখনো হতো বৈকি।

 প্রশ্নঃ নয়মাসে আপনার জীবনের প্রতি কোন যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি এসেছিল, কেমন ভাবে এবং কেন?

 উঃ নাগরপুরের। আকস্মিকভাবে একটি চরম অসুবিধাজনক অবস্থান থেকে শত্রুর উপর গুলি চালাচ্ছিলাম। তিন দিকেই আমাদের সবার রাস্তা বন্ধ ছিল। চতুর্থ দিকে কেবল পানি আর পানি। ইতিমধ্যে আমার দিকে অগ্রসরমান শত্রুর কমাণ্ডারকে নিজের দলের ছেলে মনে করে তাকে অনেক কছে এগুতে দিই। ৪০ গজ দূরে থাকতে তাকে শত্রু বলে চিনতে পেরে গুলি ছুড়তে থাকি। পরে তিন দিকের শত্রুবেষ্টনী ভেদ করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাই।

 প্রশ্নঃ স্যার মুজিবনগর থেকে আপনি কখন সক্রিয় সাহায্য পেয়েছেন?

 উঃ আগষ্ট মাসের পূর্ব পর্যন্ত মুজিবনগর থেকে কোন সাহায্য পাইনি। পরে অবশ্য পেয়েছি।

 প্রশ্নঃ আপনার অধীনে যে সব জওয়ান আছে তাদের মধ্যে কে কে আপনাকে প্রায় অধিকাংশ যুদ্ধে ছায়ার মতো অনুসরণ করতো?

 উঃ সবু, খোকা, হালিম, ফজলুল হক, আবদুল্লা, ফজলু, আজাহার, লতিফ, দুলাল, মাসুদ, বেনু, শামসু, সাখাওয়াত এবং আরো কয়েকজন।

 প্রশ্নঃ মুক্তিযুদ্ধে আপনাকে কে প্রেরণা জোগাতেন।

 উঃ বাঙ্গালী জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।

কাদের বাহানীর গঠন ও যুদ্ধ তৎপরতা-২[১]

॥ কাদের বাহিনী সাড়ে তিনশো লড়াই-এ অংশ নিয়েছে॥

 কাদের বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার। এদের সহায়ক স্বেচ্ছোসেবকদের সংখ্যা ছিল ৭২ হাজারেরও বেশী। একটি সেনাবাহিনীরমতো সুশৃঙ্খল প্রশাসন ব্যবস্থা। সমগ্র টাঙ্গাইল জেলা এবং ঢাকা,


  1. কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে রচিত প্রতিবেদন থেকে সংকলিত। প্রতিবেদনটি ‘দৈনিক বাংলা’ ৮-১৩ ডিসেম্বর ৭২-এ বিভিন্ন শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। সাক্ষাৎকারটি গ্রহন করেছিলেন হেদায়েত হোসাইন মোরশেদ।