পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৫

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড

সেই সময় বাংলাদেশ মহিলা সমিতি এখানে খুব কাজ করছিল। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং মহিলা সমিতির সদস্যরা পার্লামেণ্টের অধিবেশনের সময় নিয়মিত গিয়ে পার্লামেণ্ট ভবনে বসে থাকতেন। সদস্যদের কাছ থেকে অবশেষে তারা শতধিক পার্লামেণ্ট সদস্যের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিলেনু বাংলাদেশের দাবি সমর্থন করে পার্লামেণ্টে একটা প্রস্তাব আনার ব্যাপারে। সেখানে আবার আর একটা সংশ্লেষ আছে, তখন মহিলা সমিতির সাধারণ ছিলেন আমার স্ত্রী সুফিয়া রহমান।

সিরাজুর রহমন
বিবিসি, বাংলা বিভাগ
১৯৮০


অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান

 একাত্তরের র্মাচ মাসে যখন অসহযোগ আন্দোলন তুমুল ভাবে চলেছে এবং ইয়াহিয়া মুজিব আলোচনার প্রহসলীলা তুংগে উঠছে সে সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা নিষ্ক্রীয় ছিলাম না। আমি অনুভব করেছিলাম যে একটি দুযোর্গ আসছে। সুতারাং আমরা ছেলেমেয়েদের সকল কে আমি সন্নিকটে আনতে চেয়েছিলাম। ঢাকায় আমার বড় মেয়ে মোহাম্মদপুরে তার নিজের বাড়িতে থাকত। এলাকাটি অবাঙ্গালীদের। তাদের বাড়িতে ঢিল পড়ত রাত্রে। কখনো কখনো সরাসরি হুমকী ও তাদের দেয়া হয়েছে। এখবর পেয়ে আমি ১৯৭১ সালের ২২শে মার্চ আমার গাড়ী নিয়ে ঢাকায় চলে আসি। পথে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি তবে বিকেলের দিকে মোহাম্মদপুর এলাকায় আমার মেয়ের বাড়ির কাছে মোড় ঘুরতে গিয়ে একটি অদ্ভুদ দৃশ্য চোখে পড়ল। একটি কাক তড়িতাহত হয়ে মাটিতে মরে পড়ে আছে। আর এক তলা বাড়ির কার্নিশে এক সারি কাক বসে আছে। একটি কাক কা কা করে মৃত কাকটির শরীর প্রায় ছুঁয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে। এভাবে সব কটি কাক একটি অর্ধবৃত্তের মতো আবর্ত রচনা করে একে একে উড়ে চলে গেল। কাকগুলো তাদের মৃতের প্রতি শেষ বেদনা নিবেদন করলো। দৃশ্যটি দেখেই আমার ছেলেকে গাড়ি থামাতে বলেছিলাম। আমি গাড়িতে মৃতের গাড়িতে সম্পূর্ণ দৃশ্যটি দেখলাম। সে দশ্যের কুশীলবরা হচেছ কাক এবং রংগমঞ্চ হচ্ছে বাড়ির কার্নিশ এবং গাড়ি চলাচলের রাস্তা। আমি হঠাৎ কেন যেন শংকিত হলাম। শুনেছি ইতর প্রাণীরা পূর্বাহ্নেই অনুভব করে যে সংকট আসছে। আমরা তখন মনে যে হল যে হয়তবা বিপদ শিগগিরই আসবে। সেদিন ছিল ২২শে মার্চ। আমি চট্টগ্রাম থেকে গাড়ি করে ঢাকায় এসেছিলাম। আমার বড় মেয়ে জামাই এবং তাদের দু’টি সন্তানকে নিয়ে যেতে।

 মোহাম্মদপুরে মেয়ের বাসায় পৌঁছে মুনীর চৌধুরী এবং মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম মনে আছে। মুনীর চৌধুরী রাত্রে দেখা করতে এসেছিলেন। পরদিন সকালে সবাইকে নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে যাত্রা করলাম। এবারেও কোন বিঘ্ন ঘটেনি। শুধুমাত্র ব্রীজে ডাইভারশনের কাছে এসে কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমাদের গাড়ি ডাইভারশনের পথে নেমে ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় যখন এসেছে তখন উল্টোদিকে থেকে আমাদের মুখোমুখি হর্ন বাজিয়ে একটি আর্মি জীপ উপস্থিত হল। আমরা সঙ্গে সঙ্গেই পিছিয়ে যেতে লাগলাম। কিন্তু জীপটি না এগিয়ে সেও পিছিয়ে গেল এবং আমাদের এগুতে বলল। আমরা যেই একটু এগিয়েছি তখন আবার নেমে এসে আমাদের মুখোমুখি দাঁড়ালো। আমরা তখন পেছনে চালিয়ে একেবারে বড় রাস্তায় উঠে অপেক্ষা করতে লাগলাম। জীপটিও পেছনে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আমাদের এগিয়ে আসতে বললো কিন্তু আমরা ভয়ে এগুলাম না। তখন জীপটি এল, বড় রাস্তায় পড়ল এবং আমাদের গাড়ীর পাশ দিয়ে চললো। আমাদের গাড়ী পেরুবার সময় জীপের মধ্যে কয়েকজনের অট্ট হাসি শুনলাম এবং একটি শূন্য মদের বোতল রাস্তায় এসে ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের গাড়ীতে কোন আঘাত লাগেনি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পৌঁছে দেখলাম, সারাদেশে একটা কিছু যেন