পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কবীর 292 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড হ্যাঁ, অসংখ্য শহীদের বুকের পাঁজরার হাড় যেন চাঁদ হয়ে ফুটে উঠেছে আকাশের গায়ে। পড়িসনিনজরুলের কৃষকের ঈদ? শরীফ- নিশ্চয়ই পড়েছি। বাংলার নিঃস্ব শোষিত জনগণের মর্মকথাকে নজরুল প্রাণস্পশী ভাষায় ছন্দে প্রকাশ ক্ষুধায় আসে না নিদ ক্ষুধাতুর সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ? আমারও প্রশ্ন তাই রে- লক্ষ লক্ষ মানুষের লাশ বুকে নিয়ে সারা বাংলা যখন গোরস্থান- নির্যাতিত শিশু, নারী, বৃদ্ধার কান্নায় বাংলা যখন ক্রন্দসী, মজলুম মানুষের ফরিয়াদে বিশ্বের বাতাস ভারাক্রন্ত তখন ঈদকে খুশির ঈদ বলে মোবারকবাদ জানাতে পাচ্ছি না। তবু তো প্রকৃতির নিয়মের ব্যতিক্রম হতে পারে না। রোজই সূর্য উঠছে ভোরকে রাত্রির কোল থেকে ছিনিয়ে আনতে। আবার সে সূর্য অস্ত যায়, সন্ধ্যে আসে ছায়াভীরু পদক্ষেপে কিন্তু আমরা কি আগের মত- সেই ভয়ংকর রাক্ষুসে রাত ২৫ শের পূর্বে, যেমন করে সকালের সূর্যের আলোয় নেয়ে উঠতাম- তেমনটা কি এখন পারি? সন্ধ্যা মায়াময় গন্ধ ছড়ায় না। একটা ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করে ঐ অন্ধকারে গা ঢেকেই পাক হানাদাররা আমাদের আক্রমণ করেছিল- আজও করছে- দিন-রাতে আমরা সবসময়ই মৃত্যুর মুখোমুখি- শয়তানের সম্মুখীন। জানি কবীর, আমরা তাই গতানুগতিকভাবে ঈদকে মোবারকবাদ জানাতে পারবো না, জানাতে পারবো না, তেমন করে খুশির ঢেউয়ে গা ভাসাতে পারবো না। কিন্তু তাই বলে ঈদ-উল ফিতর তো ফিরে যাবে না আমাদের দ্বার থেকে। না, ফিরিয়েও দিবো না আমরা- আমরা নতুনভাবে ঈদকে স্বাগত জানাবো। (নেপথ্যে মেশিনগানের শব্দ) ঐ শোন- গুলির শব্দ- সংঘর্ষ চলছে হানাদারদের সাথে মুক্তিবাহিনীর- (একটু হেসে) ঢাকায় ঈদের চাঁদ দেখলে ছোট ছেলেরা পটকা ফুটাতো উল্লাসে- আজকের পটকা ঐ গুলির আওয়াজ, বোমার আওয়াজ। বেশ তো আজকের ঈদকে আমরা সম্বর্ধনা জানালাম বন্দুকের গুলি ছুড়ে, শপথ নিয়ে কসম খেয়েবাংলাদেশকে শত্রমুক্ত করে ঈদের প্রকৃত তাৎপর্যে খুশির বন্যা বইয়ে দেবো ঘরে ঘরে। আমাদের জীবনের ঈদকে যারা চির স্নান করে দিতে ঘরে ঘরে আগুন জুলিয়েছে, আমাদের মা বোনের ইজ্জত নিয়েছে তাদের পশুহস্তকে চূর্ণ করেই পালন করবো ঈদোৎসব। হ্যাঁ বাবা শরীফ, তোরা কি কেবল গল্প করবি? একটু কিছু মুখে দিবি না? ইফতার করেছিস দুটুকরো রুটি খেয়ে দেবো মা- এক মাসের সিয়াম আমাদের চরিত্রে এনেছে দৃঢ়তা, হৃদয়ে দিয়েছে বল, অনুভূতিকে করেছে তীক্ষ, বাহুতে দিয়েছে লড়াই-এর শক্তি