পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

70 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ২৯ জুলাই, ১৯৭১ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা সম্পর্কে বিশ্বের দৃষ্টিকে বিভ্রান্ত করার যতো অপচেষ্টাই পাকিস্তানী সামরিক চক্র করুক, কিন্তু যা সত্য তাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা সম্ভব নয়। বিশ্বের পত্র-পত্রিকায় নিয়মিতই বাংলাদেশের ঘটনাবলীর খবরাখবর প্রকাশিত হচ্ছে। আমেরিকান বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক নিউজউইক’ ও লণ্ডনের প্রভাবশালী দৈনিক দি টাইমস’-এ বাংলাদেশে পাকিস্তানী বর্বর সৈন্যদের মোকাবিলায় মুক্তি বাহিনীর সাফল্যজনক অভিযান পরিচালনার খবর প্রকাশিত হয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এবং তথাকথিত দুষ্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারীদের নির্মুল করা হয়েছে বলে যে দাবী করেছেন, সে প্রসঙ্গে ‘The Bengalis Strike Back’ শীর্ষক একটি নিবন্ধে নিউজউইক’ পত্রিকা বলেঃ ইয়াহিয়ার জন্যে দুঃখ হয়, কেননা তিনি যা দাবী করেছেন প্রকৃত ঘটনা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। পত্রিকায় বলা হয় যে, সমগ্র বাংলাদেশে মুক্তি বাহিনীর প্রতিরোধ অভিযান ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। এ অভিযান গোড়া থেকেই পরিচালিত হচ্ছে এবং উন্নত সমরসজ্জায় সজ্জিত পাকিস্তান সামরিক বাহিনী চরমভাবে ঘায়েল হচ্ছে। ‘নিউজউইক’ বলেঃ বাংলাদেশের বহু কলকারখানা ধ্বংস করা হয়েছে, ডিনামাইট দিয়ে প্রধান প্রধান পত্রিকায় বলা হয়, সামরিক বাহিনী অধিকৃত ঢাকা শহরেও নিয়মিত গোলাগুলি চলছে। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বর্বরোচিত কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জাগ্রত মুক্তি সংগ্রামীদের অভিযান বাংলাদেশের সর্বত্রই অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল সফরকারী নিউজউইকের সংবাদদাতা মিঃ লোরেন জেনকিনস এখানে মুক্তিবাহিনীর হাতে খুলনার দু’জন দালালের ‘লালরঙা চিঠি’ প্রাপ্তি এবং কড়া সামরিক পাহারাধীন থেকেও শোচনীয় মৃত্যুর খবর জানান। লণ্ডন টাইমসের রিপোর্টার মাইকেল হর্নসবী জানান যে, বাংলাদেশে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী অহরহ মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের দ্বারা আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা রাস্তা, রেলওয়ে ব্রীজ, রেললাইন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করে পাকিস্তানী সামরিক প্রশাসনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। লণ্ডন টাইমসের সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশের সকল শহর বিশেষ করে ঢাকা শহরে গেরিলাদের পাক বাহিনীর ওপর বোমা নিক্ষেপ করছে। হর্নসবী জানান যে, গেরিলা বাহিনীর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ পাক বাহিনী আশপাশের এলাকার বেসামরিক বাসিন্দাদের ওপর উৎপীড়ন করে থাকে। বস্তুতঃ বাংলাদেশের পাক বাহিনী অধিকৃত এলাকায় এমনি প্রশাসনিক অচলাবস্থাই বিরাজ করছে। মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের আক্রমণে পাক সেনারা এখানে-ওখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দিন দিনই হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ছে। এই বাস্তব সত্যকে গোপন করার মতো অপচেষ্টাই পাকিস্তানী জঙ্গী সরকার করুক, বিশ্বের চোখে ধরা পড়বেই। আর এভাবে বাংলার সার্বিক মুক্তিকামী মানুষের সপক্ষে গড়ে উঠবে বিশ্বজনমত।