পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
২৬৫
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাভাষার পক্ষে ইসলামী ভ্রাতৃসংঘের ঘোষণা ইসলাম ভ্রাতৃসংঘ মে-১৯৫২

ইসলাম, ভাষা সমস্যা ও আমরা

ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ

ইসলামী ভ্রাতৃসংঘের প্রচার দপ্তদপ্ত

৬নং নয়া পল্টন, ঢাকা হইতে প্রকাশিত

‘আমাদের প্রেস’

১৯নং আজিমপুর রোড হইতে মুদ্রিত।

 ২১শে ফেব্রুয়ারী পূর্ব পাকিস্তানের গণজাগরণের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন। পূর্ব বাংলার সাড়ে চার কোটি অধিবাসী এইদিন দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করেছে: বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতেই হবে।

 কিন্তু কেন এই দাবী? সাড়ে চার কোটি অধিবাসীর প্রাণের পরতে পরতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠল কোন যুক্তির ভিত্তিতে?

 সে যুক্তি একটি নয়, দু’টি নয়, অগণিত। ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ বিশ্বাস করে, জনসাধারণের সেই সব যুক্ত ইসলামের আলোকে সুপ্রতিষ্ঠিত।

 প্রতিটি নাগরিকের দেহ এবং মনের সর্বাংগীণ বিকাশ ইসলামী রাষ্ট্রে সর্বপ্রধান লক্ষ্য। ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, মাতৃভাষার সাহায্য ছাড়া এ বিকাশ সাধন করা একেবারেই অসম্ভব। পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশে জাতীয় উন্নয়নের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে মাতৃভাষার উন্নতিসাধনের মধ্যদিয়ে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (দঃ) আবির্ভাবের সময় হিব্রু ভাষা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদশালী ভাষা হিসেবে পরিগণিত হতো; কিন্তু সাধারণ মানুষের বোধগম্য হওয়ার জন্যই অপেক্ষাকৃত সহজ ভাষা আরবীতে পবিত্র কোরান শরীফ নাজেল হয়। আরবীর পরিবর্তে সেদিন যদি অন্য কোন ভাষায় কোরান শরীফ নাজেল হতো তবে আরববাসীদের পক্ষে ইসলামের বাণী অতি অল্প সময়ে গ্রহণ করা সম্ভব হতো না। পূর্ব পাকিস্তানে সত্যিকার ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে ঠিক তেমনি করে মাতৃভাষার মাধ্যমে আজ ইসলামী সমাজবাদের বাণী পূর্ব-পাকিস্তানের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষার মাধ্যমে এ চেষ্টা করার অর্থ হবে আমাদের অগ্রগতি ব্যাহত করা।

 ইংরেজ আমলে বাংলাদেশে মুসলমানদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন হিন্দুদের তুলনায় ঘোর পশ্চাৎপদ ছিল। এর একমাত্র কারণ, ইংরেজ বাংলায় শাসন-বিস্তারের সাথে সাথেই মুসলমানদের মধ্যে ভাষা-সংকট সৃষ্টি করে। রাজভাষা ফারাসীকে বিতাড়িত করে ইংরেজরা সেখানে নিয়ে এল ইংরেজী। সদ্য আজাদীহারা মুসলমানদের ইংরেজী ভাষার প্রতি অবহেলা এবং সর্বব্যাপী অসহযোগিতা ও অজ্ঞানতার সুযোগ