পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১১

“ভারতের রাষ্ট্রভাষা সম্বন্ধে বিদ্বজ্জনের আলোচনা সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা যায় কিনা, এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হয়। উপরোক্ত বিদ্বজ্জনের আলোচনা সভার বিবরণ ১৩৪৫ সালের ফাল্গুন সংখ্যা ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সম্ভবতঃ এটাই বাংলার রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে প্রথম দাবী। এখানে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হল।

 “গত ১৯ শে ভারতের রাষ্ট্রভাষা সম্বন্ধে আলোচনা করিবার নিমিত্ত বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষৎ ভবনে একটি সভার অধিবেশন হয়। সুপণ্ডিত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয় সভাপতির আসন গ্রহণ করেন। তিনি এবং অতুলচন্দ্র গুপ্ত, অর্ধেন্দ্র কুমার গঙ্গোপাধ্যায়, উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, খগেন্দ্রনাথ মিত্র, প্রফুল্লকুমার সরকার, সুন্দরী মোহন দাস ও দ্বিজেন্দ্র নাথ মৈত্র আলোচনায় যোগদান করেন। আলোচনাটি কলিকাতার অন্ততঃ একখানি দৈনিক কাগজে বিস্তারিতভাবে বাহির হওয়া উচিত ছিল। তাহা না হওয়ায় বাঙালী বিদ্বান ও সাহিত্যিকগণের এ-বিষয়ে মত ও যুক্ত সেদিন কি বিবৃত হইয়াছিল সে বিষয়ে অবাঙালীরা সাধারণতঃ অজ্ঞ থাকিবেন। ইহা বাঞ্ছনীয় নহে।

 নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলি গৃহীত হইয়াছিলঃ

১। এই সভার মতে বাংলা ভাষার বহুলতর প্রচারের জন্য নিম্নলিখিত ও অন্যান্য উপায় অবলম্বন করা উচিতঃ
(ক) বিশেষ প্রয়োজন ভিন্ন বাঙালী মাত্রেরই দৈনন্দিন কার্য ও ব্যবহারে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা কর্তব্য।
(খ) বাংলাদেশে প্রবাসী অন্য ভাষাভাষী ব্যক্তিগণের সহিত যতদূর সম্ভব বাংলা ভাষায় কথোপকথন ও চিন্তার বিনিময় কর্তব্য।
(গ) অ-বাঙালীর মধ্যে ও বাংলার বাহিরে যাহাতে বঙ্গ-সাহিত্যের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি হয় তজ্জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করা কর্তব্য। যথা- পরীক্ষা গ্রহণ, পুরস্কার বিতরণ, বাংলা সাহিত্য আলোচনার প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও প্রতিযোগিতা নির্ধারণ প্রভৃতি।
২। এই সভার মতে ভারতীয় রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ভাষা নির্ধারণের চেষ্টা কালোচিত নহে এবং অসমীচীন। ভারতবর্ষে পূর্ণ-স্বরাজ প্রতিষ্ঠিত হইবার পর ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত সমগ্র প্রদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিবর্গ কর্তৃক রাষ্ট্রীয় ভাষা নির্দিষ্ট হওয়া উচিত।
৩। বর্তমানে যদি রাষ্ট্রভাষা নির্দিষ্ট করিতেই হয়, তবে বঙ্গ-সাহিত্যের সম্পদ ও সমৃদ্ধি এবং ঐ ভাষা বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা দ্বারা প্রভাবাম্বিত মনে রাখিয়া বঙ্গভাষাকেই রাষ্ট্রীয় ভাষারূপে নির্ধারণ করা উচিত।
৪। এই সভা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মেলন, মুসলিম সাহিত্য-সম্মেলন, প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য-সম্মেলন ও অন্যান্য বঙ্গসাহিত্য-প্রতিষ্ঠানকে এ সম্বন্ধে একযোগে কার্য করিবার জন্য অনুরোধ ও আহবান করিতেছেন।
৫। উপরিউক্ত প্রস্তাবগুলি কার্যে পরিণত করিবার জন্য যথোচিত ব্যবস্থা করিবার ভার নিম্নলিখিত ভদ্রলোকদিগকে লইয়া গঠিত কমিটির ওপর অর্পণ করা হইল। কমিটি প্রয়োজনমত সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করিতে পরিবেনঃ

 সভাপতি শ্রীযুক্ত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত আহবানকারী শ্রীযুক্ত জ্যোতিশচন্দ্র ঘোষ। সভ্যঃ শ্রীযুক্ত অতুলচন্দ্র গুপ্ত, শ্রীযুক্ত রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, শ্রীযুক্ত খগেন্দ্রনাথ মিত্র, শ্রীযুক্তা অনুরূপা দেবী, শ্রীমতী কল্যাণী মল্লিক, শ্রীযুক্ত প্রফুল্লকুমার সরকার, পণ্ডিত অমূল্যচরণ