পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৭৪
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক সভায় বাজেটের ওপর বিতর্কে মওলানা ভাসানীর বক্তব্য প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভা ১৯ই মার্চ, ১৯৪৮

 Maulana Abdul Hamid Khan: জনাব সদর সাহেব, দীর্ঘদিন যাবৎ সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ গভর্ণমেণ্টের শাসন ও শোষণ হ'তে মুক্তি লাভ করে পূর্ব্ববঙ্গের জনসাধারণ আশা করেছিল যে স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে, স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করবে, তাদের হারান গৌরব ফিরে পাবে, তারা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক উন্নতি লাভে সক্ষম হবে কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, বড় আফসোসের বিষয় যে এই হাউসে জনাব অর্থসচিব যে বাজেট পেশ করেছেন তা তিনি জনসাধারণের প্রতিনিধি হিসাবে করেননি। গভর্ণর জেনারেলের মনোনীত মেম্বর হিসাবে করেছেন। স্বাধীন দেশে, স্বাধীন পাকিস্তানে স্পেশাল পাওয়ারের মন্ত্রী দ্বারা বাজেট পেশ হবে তা আমরা কখনও আশা করিনি। জনসাধারণের মনের কথা, মনের দুঃখ ও বেদনা বুঝবার তাঁর শাক্তি নাই কারণ জনসাধারণের সঙ্গে তাঁর আদৌ কোন সংশ্রব নাই। তিনি গভর্ণর জেনারেলের প্রেরিত প্রতিনিধি। জনসাধারণের সঙ্গে তাঁর মনের কোন মিল নাই। বিংশ শতাব্দীর এই গণতান্ত্রিক যুগে এই স্বাধীন দেশে গভর্ণর জেনারেল স্পেশাল পাওয়ার ব্যবহার করবেন এটা আমাদের ধারণার অতীত।

 তারপর তিনি যে বাজেট পেশ করেছেন তাতে আমলাতান্ত্রিক ভোগবিলাসের জন্য সব কিছুই করেছেন। কিন্তু দেশের মেরুদণ্ড কৃষক মজুর যারা দিবারাত্র হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে রাজস্ব যোগায়, তাদের জন্য কিছুই করেন নাই। শতকরা ৪ জন লোক শহরে বাস করে তাদের পানীয় জলের জন্য ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছেন কিন্তু ৪ কোটি ৬০ লক্ষ গ্রামবাসীদের পানীয় জলের জন্য কোন ব্যবস্থা করেন নাই। যুক্তবঙ্গে ১৯৪৩-৪৪ সালে পুলিশ খাতে ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছিল ৩ কোটি ২ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা আর আমাদের মাননীয় অর্থ সচিব যে বাজেট উপস্থিত করেছেন তাতে কেবল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পুলিশের খাতে ব্যয় বরাদ্দ করেছেন ৩,০৩,৭৭,০০০ টাকা।

 পূর্ব্ব পাকিস্তান যারা হাসিল করেছে তাদের উপরই ইহা রক্ষা করার দায়িত্ব। পূর্ব্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ তা করতে বদ্ধপরিকর। পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যারা শত্রুতা করে ইহাকে ধ্বংস করবার চেষ্টা করবে, পূর্ব্ব পাকিস্তানের আবালবৃদ্ধবণিতা কৃষক, মজুর, সকলে সংগবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়বে এবং পাকিস্তানকে রক্ষা করবে। পুলিশের ব্যয় বৃদ্ধি করে স্বাধীন পাকিস্তানকে রক্ষা করার চেষ্টা অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়।

 দেশের শিল্প, কৃষি, নৈতিক চরিত্র ও সর্ব্বপ্রকার উন্নতি নির্ভর করে শিক্ষার উপর। কিন্তু সেই শিক্ষার জন্য ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র দুই কোটি কয়েক লক্ষ টাকা। আমি আশা করি মাননীয় অর্থ সচিব সাহেব পুলিশের ব্যয় সঙ্কোচ করে শিক্ষার খাতে যথেষ্ট টাকা বরাদ্দ করবেন এবং এই বাজেট রহিত করে নূতন আকারে আনয়ন করবেন।

 মাননীয় অর্থ সচিব সাহেব সেদিন বলেছেন যে জমিদারী প্রথা তাড়াতাড়ি উচ্ছেদ করলে এক কোটি লোক মারা যাবে বা তাদের জীবন বিপন্ন হবে। তাঁর ফিগার বুঝতে পারলাম না। পূর্ব বাংলার মোট ৪ কোটি ৬০ লক্ষ লোকের মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ কৃষিজীবী। জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করলে ১ কোটি লোক কি করে মারা যায়? এটা তিনি কি করে আবিষ্কার করলেন? গরীব কৃষকদের উপর জুট লাইসেন্স ফী বাবদ ২০ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু আপনারা জেনে অবাক হবে যে এই প্রদেশে জমিদারদের কাছে ২ কোটি টাকা সে বাকি আছে। এক ময়মনসিংহ জেলায় ২৬ লক্ষ টাকা সে বাকি। ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট সমস্ত দিন ঘুমান আর সন্ধার সময় গিয়ে দস্তখত করেন। এই বাকি সে আদায়ের কোন ব্যবস্থা করছেন না। যে সমস্ত গরীব কৃষক কৃষিঋণ