পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

98 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সংবাপত্র তারিখ শিরোনাম স্বদেশ ১৪ জুলাই, ১৯৭১ স্বাধীনতার দাবী করে মুজিব অন্যায় ১ম বর্ষঃ ৩য় সংখ্যা করেনি স্বাধীনতার দাবী করে মুজিব অন্যায় করেনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবী করে শেখ মুজিবুর রহমান কোন অন্যায় করেননি। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি দেশের স্বাধীনতা চেয়ে থাকেন তাহলে তিনি রাজনৈতিক অপরাধী হতে পারেন না। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে তাই আমাদের একমাত্র দাবী, মুজিবুর রহমানের মুক্তি চাই। কলাসীম, গাইঘাটা, বনগা ও বাগদার শরণার্থী শিবিরগুলি পরিদর্শনের পর কানাডার সরকারী দলের নেতা শ্রী জর্জ ল্যাচেনস সাংবাদিকদের কাছে তাঁদের এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বুধবার নয়াদিল্লী থেকে দমদম বিমান ঘাঁটিতে নেমে তাঁরা সোজা সীমান্তে শিবিরগুলি পরিদর্শনে যান। পথের দুপাশে অগণিত জনতার মিছিল তাঁদের বার বার জিজ্ঞাসার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দোভাষীকে দিয়ে জিজ্ঞাসা করান, কোথায় তাদের ঘর, কত দূর থেকে তারা আসছে। সেই একই বেদনাময় কাহিনী। মায়ের বুক রক্তলোলুপ বাহিনীর রক্তের তৃষ্ণা তাতেও মেটেনি। প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসার পথেও হিংস্র কুকুরের মত তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে যুবতী কন্যাদের লুণ্ঠন আর কিশোরীদের হত্যা- ওপার বাংলা থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের সবারই এই কাহিনী। কানাডিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি আর দেশে ফিরে যাবে না? হ্যাঁ যাবো, যদি মুজিব আমাদের ডাক দেয়, সবার মুখে একই উত্তর। আবেগেআপ্লুত কানাডার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা মিঃ এভু ব্রেউইন, কনজারভেটিভ দলের নেতা মিঃ হীথ ম্যাকোয়ারি ও লিবারেল পাটির নেতা মিঃ জর্জ ল্যাচেনস বলে ওঠেনঃ পাকিস্তানে গিয়ে আমাদের প্রধান কাজ হবে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবী তোলা। গণতান্ত্রিক কাঠামোয় কেউ যদি স্বাধীনতার দাবী করে তাহলে সে কিছু অন্যায় করবে না। কানাডায় এমন গণতান্ত্রিক দল আছে যারা কুইবেকের স্বাধীনতার দাবী তুলেছে। তাদের বিচ্ছিন্নতাকামী বলে তো জেলে পোরা হয়নি। কিংবা তাদের দেশদ্রোহী বানিয়ে পৃথিবীর সামনে হেয় করবারও কোন চেষ্ট হয়নি। নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা শ্রী এভু ব্রেইউন তাঁদের সফরের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে বলেন, দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁরা ভারতে এসেছেন। একটি মানবিক কর্তব্য সম্পাদনের দায়িত্ব। অপরটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা পরীক্ষা করা। মানবিকতার দিক থেকে ভারতের কাঁধে সবচেয়ে বেশী বোঝা এসে পড়েছে। কানাডা তার কতটুকু সহজ করে দিতে পারে সেদিকে তাদের প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধান না হলে বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হবে বলে তাঁদের বিশ্বাস। কারণ আমেরিকা, চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশের ওপর লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাই ভয় হয়, রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা সুদূরপরাহত না হয়ে পড়ে।