পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

146 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় সামরিক দিক হইতেও ঐক্যজোটের স্বাধীন বাং ৪ সেপ্টেমবর, ১৯৭১ অনিবার্য তাগিদ। ১ম বর্যঃ ৯ম সংখ্যা সম্পাদকীয় সামরিক দিক হইতেও ঐক্যজোটের অনিবার্য তাগিদ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক পরিচালনা ও সাফল্যের জন্য জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠনের জরুরী আবশ্যিকতার কথা আমরা ইতিপুর্বে একাধিকবার আলোচনা করিয়াছি। আমরা বার বার এ কথাটাই বলিয়াছি যে, বিগত নির্বাচনে কোন দল কত ভোট পাইয়াছিল, কোন দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করিয়াছিল প্রভৃতি কথা দুর্ধর্ষ শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের পরিস্থিতে অবাস্তব। আজিকার পরিস্থিতিতেই সবচেয়ে বড় কথা হইল হানাদার পাক সেনাদলকে পরাজিত করা, অধিকৃত বাংলাদেশকে মুক্ত করা, বাস্তুত্যাগীদের পুনবার্সন করা এবং ধর্ম-জাতি-ভাষা নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের সামনে নতুন জীবনের পথ খুলিয়া দেওয়া এই মহান কর্তব্য সাধনের জন্যই শত্রর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণকারী ছোট বড় সমস্ত দলও গ্রুপের একতা জরুরী প্রয়োজন। এই সোজা, সরল কথাটা আমরা ইতিপুর্বে বাংলাদেশের সমস্ত জনগণ ও আওয়ামীলীগসহ সমস্ত গণতন্ত্রিক শক্তির নিকট একাধিকবার পেশ করিয়াছি এবং একতার জন্য আবেদনও জানাইয়াছি। এই প্রসঙ্গে আমরা ভিয়েতনামের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলিয়া ধরিয়া দেখাইয়াছি যে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোন দলই আমরা বড় দল” বা আমরা “বেশী বিপ্লবী” বলিয়া বড়াই করিয়া জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠনে অস্বীকার করে নাই । বরং সমস্ত দেশপ্রেমিক দল ও সংস্থা অহমিকা, সংকীর্নতা, প্রভৃতি পরিহার করিয়া শত্রর বিরুদ্ধে এক ব্যাপক একতা গড়িয়া তুলিয়াছেন। ইহাই হইল মূল রাজনৈতিক কারন যার জন্য ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ এত দূর্বার, এত সাফল্যমণ্ডিত। ভিয়েতনামের ঐ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখাইয়া আমরা বলিয়াছি যে, বাংলাদেশে সমস্ত গণতান্ত্রিক ও সংগ্রামী শক্তির সমবায়ে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠন দেশের জনগণের মনে সৃষ্টি করিবে নতুন প্রেরনা, সংগ্রাম হইবে অধিকতর সংগঠিত, দুনিয়ার প্রগতিশীল শক্তির সাহায্য ও সমর্থন পাইতে অধিকতর সুবিধা হইবে এবং এগুলির ফলে আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রাম এমন দূর্বার শক্তি সমর্থন করিবে যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া চক্রের পশু সেনাদলের পরাজয় নিশ্চিত ও তুরাম্বিত হইবে। দুঃখের বিষয়, কোন কোন দলের নেতৃত্বের অহমিকা ও বুর্জোয়াসুলভ সংকীর্নতার জন্য জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠিত হয় নাই। কিন্তু ফ্রন্ট আজও গঠিত হয় নাই বলিয়া উহার প্রয়োজনীয়তা ফুরাইয়া যায় নাই। বরং আজ আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রাম এমন একটি পর্যায়ে আসিয়া পৌঁছিয়াছে যে, জাতীয় মক্তিফ্রন্ট গঠন আরও অপরিহার্য হইয়া উঠিয়াছে। গত পাচ মাসে আমাদের মুক্তিবাহিনী সংখ্যায় বাড়িয়াছে, তাহারা অধিকতর সংগঠিত হইয়াছেন এবং সামরিক দিক হইতে তাহারা আজ অধিকতর দক্ষ। এসবের বাস্তব প্রমাণ আমরা প্রতিদিন পাইতেছি রণক্ষেত্রে- যেখানে শত্রুসৈন্য ক্রমাগত মার খাইতেছে। ইহা ছাড়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আজ গড়িয়া উঠিয়াছে বহু গেরিলা দল। তাহারাও শত্রু পক্ষকে অবিরত নাজেহাল করিতেছেন।