পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

212 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বিপ্লবী বাংলাদেশ ২৪ অক্টোবর, ১৯৭১ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ১ম বর্ষঃ ১০ম সংখ্যা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম রক্তের একট নদী পেরিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে-এ সত্য আজ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে দিবালোকের মত সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও হানাদারমুক্ত হতে পারেনি আজও। সাম্রাজ্যবাদপুষ্ট পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বর সৈন্যরা রাহুগ্রাসের মত বাংলাদেশ আকড়ে আছে। এই পশ্চিমা নাগপাশ থেকে জননী জন্মভূমিকে মুক্ত করতে হবে সর্বাগ্রে চাই একতা। মুক্তিযোদ্ধারা যেমন আজ বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে একতাবদ্ধ হতে পেরেছে তেমনি জনগণকেও একতাবদ্ধ হতে হবে। প্রতি মহুর্তে স্মরণ রাখতে হবে একটা দেশের মুক্ত আন্দোলন তখনই সার্থক হয় যখন সে দেশের জনগণ সমস্ত সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা, আমরা একটা দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছি। যে দেশের সৈন্যরা আমাদের ঘর পুড়িয়েছে, মা-বোনের ইজ্জত ছিনিয়েছে, বাবা-ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এক কথায় বলতে গেলে সোনার বাংলাকে ওরা শ্মশান করেছে। কাজেই সে কথা মনে রেখেই স্বাধীনতা আন্দোলনে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জাতীয় কর্তব্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দেলনে আজ যে সমস্যা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হল রাজনৈতিক মতানৈক্য। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ইঠেছে। এতে আন্দোলন বিঘ্নিতই হবে। আজকে জাতির যুগসন্ধিক্ষণে দেশমাতৃকার মুক্তিই প্রতিটি দলের সমর্থকদের মুখ্য লক্ষ্য হওয়া উচিত। রাজনৈতিক মতামতের সময় অনেক পাওয়া যাবে কিন্তু আজকের এই পরম মুহুর্তকে যদি কোন্দলের দ্বারা অবহেলা করা হয় তাহলে আগামী দিনের বংশদররা কিছুতেই আমাদের ক্ষমা করবে না। কে কতটুকু ক্ষমতা আকড়ে আছে এই সংকীর্ণতার বেড়াজাল ভেঙ্গে জাতির দুদিনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এক কাতারে। মানুষের চেয়ে মানুষের কর্ম বড়। তাই ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করলে তাকে ছুড়ে ফেলা হয় জাতির অঙ্গন থেকে ডাষ্টবিনে, তা এই পৃথিবীর শুরু থেকে হয়ে আসছে। জনতাই দেশের মালিক। দেশ স্বাধীন হলে কোন দল কিংবা কোন ব্যক্তি দেশের প্রকৃত বন্ধু তার বিচার দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। কোন দল বা মতের ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ না হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে কিংবা মুক্তিযোদ্ধা হতে প্রতিটি দলের প্রতিটি সমর্থককে এগিয়ে আসতে হবে। এ সংগ্রামে যদি আমরা উত্তীর্ণ হতে পারি তবে বিশ্বে বাংলাদেশকে নিয়ে সমস্ত ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে আচিরেই ংলাদেশকে হানাদারমুক্ত করা যাবে। ংলাদেশের অনেক হিন্দু যুবকের মুখে শোনা যায়, “আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার হয়েছে সবচেয়ে বেশী অতএব আমরা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেব কেন?” অত্যাচার হয়েছে একথা সত্য। কিন্তু এমন ধারণা পোষণ করে এখানে যারা মুক্তিসংগ্রাম থেকে দূরে সরে আছে তাদের উদ্দেশ্যে আমরা একথাই বলব যে