পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

231 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড পর্তুগীজ ওলন্দাজ, ইংরেজ দসু্যর দল। জননী জন্মভূমির বুক চিরিয়া চিরিয়া কাড়িয়া নিয়াছে সোনালী সম্পদ। সর্ব শেষে আসিয়াছে পাঞ্জাবী লুটেরা দসু্যর দল। তুলনাহীন নিষ্ঠুরতায় তারা কামড়াইয়া ছিড়িয়া খাইয়াছে বাংগালীর হাড় মাংস কলিজা, দুই হাতে লুটিয়া নিয়াছে বাংলার সর্বস্ব। এই সম্পদলোভী দস্যদানবের দল বাংলাকে ব্যবহার করিয়াছে কলোনী হিসাবে, পণ্য বিক্রয়ের অবাধ মুনাফা লুটিবার খোলা বাজার হিসাবে। আর এইভাবেই তারা একদিনের সোনার বাংলাকে পরিণত করিয়াছে এক অন্তহীন দুঃখের ভাগড়ে। লুটেরা দসু্যদের সঙ্গে যোগ দিয়াছে ঝড় বন্যা প্লাবন। প্রকৃতি দানব সৰ্বাত্মক হিংস্ৰতা লইয়া বার বার ছোবল হানিয়াছে বাংলার বুকে, ছিড়িয়া ফাঁড়িয়া তছনছ করিয়াছে বাংলার মাটি, মানুষ আর তার অর্থনীতি। দিনে দিনে বাঙ্গালীদের অবস্থার ক্রমশঃ অবনতি ঘটিয়াছে। ক্ষুধা, দারিদ্র, অনটন আর দুর্ভোগ তাদের ললাটে জাকিয়া বসিয়াছে দুরপনেয় কলঙ্ক চিহ্ন হইয়া। বাংলাদেশকে একদিন বলা হইত প্রাচ্যের শস্য ভাণ্ডার। কিন্তু এই শস্যভাণ্ডার একদিন পরিণত হইয়াছে ক্রমাবনতিশীল শস্য ঘটতির দেশে। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল মোটামুটিভাবে বার্ষিক ১২ লক্ষ টন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে কমপক্ষে ২৯ লক্ষ টন খাদ্যশস্য আমদানী এবং সঙ্গে সঙ্গে জনগণের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করিতে না পারিলে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধের কোন আশা নাই। বলা বাহুল্য, ইহা এক অসম্ভব ব্যাপার। কারণ জঙ্গীশাহী বাংলার মানুষকে মারিতে চায়, তাদের বাঁচাইয়া রাখার জন্য কসাইদের কোন গরজ নাই। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধকল্পে ১৫টি বা তারও বেশী সি, ৩০ পরিবহন বিমানযোগে সেখানে খাদ্যশস্য নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত রহিয়াছে বলিয়া জানাইয়াছে। দূর্গত মানবতার সেবাই যদি এই প্রস্তাবের লক্ষ্য হয়, তবে ইহা একটি মহান প্রস্তাব একথা স্বীকার করিতে আমাদের দ্বিধা নাই। কিন্তু একট প্রশ্ন আছে। কাহার হাতে এই খাদ্যশস্য দেওয়া হইবে, কাহার মাধ্যমে হাতে খাদ্যশস্য তুলিয়া দেওয়ার অর্থ হইবে বাঙ্গালীদের খুন করার জন্য আর কিছু বুলেট সরবরাহ করা। কারণ, এই খাদ্য সাহায্য সে নিশ্চিতভাবে বাঙ্গালীদের দাবাইয়া রাখার সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করিবে। অতীত অভিজ্ঞতা নির্ভুলভাবে এই কথাই প্রমাণ করিয়াছে। তাই বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের আবেদন, বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষকে বাঁচাইবার জন্য সাহায্য সামগ্ৰী লইয়া আগাইয়া আসুন। মানবতার নামেই আমরা আবেদন করিতেছি ক্ষুধার্ত বাঙ্গালীদের মুখে অন্ন তুলিয়া দিন। কিন্তু এ সাহায্য সামগ্রী যেন কোনমতেই ইয়াহিয়ার হাতে না যায়। যে কোন সাহায্য দ্রব্য পৌছাইতে হইবে স্বাধীন বাংলা সরকারের হাতে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সরকারই বাংলাদেশের একমাত্র বৈধ সরকার। আর এই সরকারই বাংলার এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মোকাবিলা করিতে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হইবেন বলিয়া আশা করা যায়। যদি কেহ পাকিস্তান সরকারের হাতে খাদ্যসামগ্ৰী তুলিয়া দেন, আমরা ধরিয়া নিব বুভুক্ষু মানুষকে খাদ্য সরবরাহের না ভাঙ্গাইয়া তাহারা ধনীদের হাতে বাঙালী নিধনের হাতিয়ারই তুলিয়া দিতেছেন। সংশ্লিষ্ট সকলকে এই স্পষ্টভাবে মনে রাখিতে হইবে।