পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

235 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বাংলার বাণী ২১ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘের অগ্নিপরীক্ষা মুজিব নগরঃ ৪র্থ সংখ্যা Ջ5, Գ Հ সম্পাদকীয় জাতিসংঘের অগ্নিপরীক্ষা আজ ২১শে সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হইতেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আজ বৈঠকে মিলিত হইয়াই সর্বাগ্রে যে জটিল রাজনৈতিক ইসু'টির জুলন্ত সূর্যের মুখোমুখি হইবে উহা হইতেছে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। মানবাদিকার সংরক্ষণের সুমহান ওয়াদাবদ্ধ জাতিসংঘের আঙ্গিনায় পাশাপাশি উপবিষ্ট হইয়া দলমত নির্বিশেষে সুসভ্য পৃথিবীর সকল জাতি ছো মেলিলেই দেখিতে পাইবে বিশ্বের একান্তে এই বাংলাদেশে কিভাবে এক পররাজ্যলোভী হানাদার দসু্যর হিংস্র বর্বরতায় দশ লক্ষ মানুষের রক্তের গঙ্গা প্রবাহিত হইতেছে, কিভাবে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের আত্মার অমোঘ বাণীকে, মৌলিক মানবিক অধিকারকে, শাশ্বত স্বাধীনতার দুরন্ত স্পৃহাকে শক্তির জোরে পিষিয়া মারার উন্মত্ত প্রচেষ্টা চলিতেছে, কিভাবে কারারুদ্ধ করিয়া রাখা হইয়াছে বাংলার মুকুটহীন সম্রাট স্বাধীন বাংলার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, কিভাবে তাকে পৃথিবী হইতে সরাইয়া দেওয়ার ঘৃণ্য প্রয়াসে উদ্যত হইয়া আছে জল্লাদের হাতিয়ার। গত ছয় মাসে বাংলাদেশে যা ঘটিয়া গিয়াছে, বাংলাদেশে আজো যা ঘটিতেছে হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানী কসাই বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধকে ভণ্ডুল করিয়া দেওয়ার জন্য যে হিংস্র বর্বরতা, যে জঘন্য পোড়ামাটি নীতির আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে, যেভাবে বাংলাদেশে বলদপী আক্রমণকারীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ পদচারণায় মানবাধিকার ভূলুষ্ঠিত হইতেছে, ধর্ষিত নিগৃহীত হইতেছে মৌলিক মানবিক মূল্যবোধ, অসহায় মানবতা, সভ্য মানুষের ইতিহাসে উহার কোন নজির নাই। তাই জাতিসংঘের ইতিহাসেও বাংলাদেশ ইসু'টি এক নজিরবিহীন তাৎপর্যপূর্ণ অদ্বিতীয় ইসু'। বাংলাদেশে মানবেতিহাসের ঘৃণ্যতম বর্বরতা এবং ভয়াবহতম গণহত্যার রক্তাক্ত পটভূমিতে আজ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হইতেছে। সুতরাং বলিলে এতটুকু অত্যুক্তি হইবে না যে, জাতিসংঘের চলতি অধিবেশন হইবে বিশ্ব সংস্থার ইতিহাসের সব চাইতে সংকটজনক অধিবেশন। এই অধিবেশনে বাংলাদেশ ইসু'টি জাতিসংঘের জন্য ডাকিয়া আনিয়াছে এক অগ্নিপরীক্ষা। বাংলাদেশ ইসু কেন্দ্রিক এই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া না হওয়ার উপর নির্ভর করে জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ বলাবাহুল্য, একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক আড্ডাখানা হিসাবে বা সাম্রাজ্যবাদী, উপনিবশেবাদী শক্তির খেয়াল খুশীমত কেতুর নাচ নাচিবার জন্য ও জাতিসংঘের জন্ম হয় নাই। মানবজাতির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, বিশ্ব শান্তির নিশ্চয়তা এবং মানবিক মূল্যবোধের নিরাপত্তা বিধানের পবিত্র প্রতিশ্রুতিতেই সৃষ্টি হইয়াছে এই বিশ্ব সংস্থার। জাতিসংঘ সনদে সুস্পষ্টভাবেই গণহত্যা প্রতিরোধ এবং এক দেশ কর্তৃক অন্য দেশ সশস্ত্র হামলা বন্ধের ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দ্ব্যর্থহীন ওয়াদা লিপিবদ্ধ রহিয়াছে। কিন্তু গভীর দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে এ কথা না বলিয়া পারা যায় না যে বাংলাদেশে হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণ এবং গণহত্যা প্রতিরোধের ব্যাপারে জাতিসংঘ উহার বিঘোষিত দায়িত্ব পালনে চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছে। জাতিসংঘের এই ব্যর্থতা জাতিসংঘের সুমহান ভূমিকা সম্পর্কে আস্থাবান শান্তিকামী মানবজাতির প্রতি চরম বিশ্বাসঘাকতারই শামিল। বিগত মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলাদেশে অতুলনীয় অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু হইলে জল্লাদ ইয়াহিয়া বাংলাদেশে ব্যাপক হারে সৈন্য সমাবেশ করিতে শুরু করে। ২৫শে মার্চ রাত্রে কসাই