পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

458 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ মার্কিন বৈদেশিক নীতি ও বাংলাদেশ অভিযান ২৫ নভেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা মার্কিন বৈদেশিক নীতি ও বাংলাদেশ (অভিযান রাজনৈতিক পর্যালোচক) বাংলাদেশ সমস্যার গভীরতা খতিয়ে দেখার জন্য ভারত আসবেন। খবরে আরও বলা হয়েছে যে, তাঁরা বাংলাদেশের ও ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করবেন এবং সত্যিকারভাবে সমস্যার গুরুত্ব কতখানি তা দেখার জন্য বিভিন্ন শরণীর্থী শিবিরগুলি পরিদর্শন করবেন। ভারতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত আর এক খবরে জানা গেল যে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার শরণ সিং এই ধরনের ‘ফ্যাকট ফাইন্ডিং কমিটির প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বই অস্বীকার করেছেন এবং এ ব্যাপারে সরকারীভাবে তিনি কিছু জানেন না বলেও সংবাদ জানিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ আট মাস পরে, যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন তার ইন্সিত লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে চলেছে তখন হঠাৎ বাংলাদেশ সমস্যার গুরুত্ব কতখানি অথবা তার গভীরতা পরিমাপের জন্য এত ব্যস্ত হয়ে পড়ল কেন ? মার্চ মাস হতে বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার নরখাদক বাহিনী যে ধ্বংস নাট্য মঞ্চস্থ করেছে এবং সাড়ে সাত কোটি বাঙালী সেই অমানুষিক দানবীর আগ্রাসনকে যে ভাবে প্রতিহত করেছে- আর যার ফলে এককালের পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মানচিত্রের পবির্তন সূচিত হয়ে জন্ম নিয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ- তা আর যাই হোক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অজানা থাকার কথা নয়। মানবতার এই লাঞ্ছনা - জাতি হিসাবে বাঙালীকে একদিকে যেমন তাঁর অস্তিত্ব রক্ষার কঠিনতম সংগ্রাম দেহে প্রাণ সঞ্চারের অংকুর। কঙ্গোর হত্যালীলা প্রত্যক্ষ করে, এঙ্গোলা মোজাম্বিকে মনুষ্যত্বের অবমাননা দেখে, ভিয়েতনামে ঘন্টাচুক্তি মৃত্যু আর বায়াফ্রার রক্তাক্ত শ্মশান ভূমির জুলন্ত স্মৃতি মনে রেখেই বুঝি বাংলাদেশ প্রশ্নে বিশ্ববিবেক আর চোখ বুজে থাতে পারেনি। অনেক দেরীতে হলেও-মৃতদেহে প্রাণসঞ্চারের মত মমত্ববোধের প্রতিধ্বনি শোনা যায় প্রাভদা' আর ব্রান্টের কণ্ঠে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ এশিয়া আর মুখেও আমরা শুনেছি। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের মানুষ ও তাঁদের সরকার (চিহ্নিত কয়েকটি দেশ বাদে) বাঙলার এই চরম সর্বনাশের মুখে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন- দাঁড়াবার আশ্বাস দিয়েছেন। ‘৭০-এর নভেম্বরে বাংলাদেশে সামুদ্রিক জলোচ্ছাস ও মহাপ্লাবনের পর সারা পৃথিবী যে গভীর মমত্ববোধের পরিচয় দিয়েছিল-দশ লক্ষাধিক উদার হাত এগিয়ে দিয়েছিল ঠিক অনুরূপভাবে ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়ার ফ্যাসিবাদী আক্রমণে বিধ্বস্ত বাঙালীকেও পৃথিবীর মানুষ সাহায্য করেছে এবং সহানুভূতি জানিয়েছে আন্তরিক মমত্বে।