পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

59 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সেই পুরাতন খেলা জয় বাংলা ১৭ সেপ্টেম্বর, (সামরিক জান্তা কর্তৃক একজন অসামরিক ব্যক্তিকে ১ম বর্ষঃ ১৯শ Տի, ԳՖ বাংলাদেশের গভর্নর পদে নিয়োগ প্রসঙ্গে) সংখ্যা সেই পুরাতন খেলা বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় একটি নতুন নাটকের অভিনয় চলছে। নাটকটি যদিও নতুন কিন্তু তার বিষয়বস্তু অত্যন্ত পুরনো। এই বিষয়বস্তু হল, একজন অসামরিক তাঁবেদার বাঙালীকে গভর্ণরের পদে বসিয়ে বিশ্ববাসীকে বোঝানো, বাংলাদেশে আর সামরিক শাসন নেই। এমন চেষ্টা আইয়ুব খাঁও করেছিলেন। তার দশ বছরের স্বৈরাচারী শাসনে মোনেম খাঁ নামক এক বটতলার উকিলকে গভর্নর পদে বসিয়ে দুনিয়ার মানুষকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ বাঙালীদের দ্বারা শাসিত হচ্ছে। মোনেম খাঁর বদলে এবার ভাড়া পাওয়া গেছে আবদুল মোতালিব মালেক নামক এক দাঁতের ডাক্তারকে। ঢাকার লাটভবনে শুধু তাঁবেদার গভর্নর বসিয়ে নয়, পিণ্ডির জঙ্গীচক্র বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার আসল অবস্থা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য আরো ছল চাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে। হঠাৎ খুনী ইয়াহিয়া একেবারে ‘মহানুভব ব্যক্তি সেজেছেন এবং তাদের কথিত এক শ্রেণীর “রাষ্ট্রবিরোধী ” বাঙালীর প্রতি সাধারণ অনুকম্পা ও ঘোষণা করেছেন। দখলীকৃত ঢাকা বেতার থেকে বলা হয়েছে, কিছুসংখ্যক আটক লোককে নাকি জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই কিছুসংখ্যক লোক কারা, তাদের নাম ধাম কি, তা কিছু বেতার ঘোষণায় বলা হয়নি। সুতরাং আশঙ্কা হয় শিয়ালের কুমীর ছানা প্রদর্শনের মত এই ক্ষমা প্রদর্শনের মহড়াটিও জঙ্গীচক্রের কোন নতুন শয়তানি অভিসন্ধির বহিঃপ্রকাশ কিনা। একদিকে এইসব লোক দেখানো ভড়ং, অন্যদিকে দখলীকৃত বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার সৈন্যদের বর্বরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এখনো বাঙালী মেয়েদের ইজ্জত নাশ করা হচ্ছে এবং এক একজন অশিক্ষিত সেপাইকে বাঙালী মেয়েদের বলপূর্বক পত্নী (উপপত্নী) হিসাবে গ্রহণে উৎসাহ জোগানো হচ্ছে। দখলীকৃত এলাকায় এখনো চলছে গ্রামের পর গ্রাম লুন্ঠন, হত্যা ও অগ্ন্যুৎসব। দখলীকৃত এলাকায় বাঙালীদের এই অবস্থা। বিদেশেও তাদের সঙ্গে একই আচরণ করা হচ্ছে। ইয়াহিয়া চক্র বুঝতে পেরেছে, তাদের বিদেশী দূতাবাসে যেসব বাঙালী কর্মচারী রয়েছে, তাদের কেউ আর পিণ্ডির খুনীচক্রের প্রতি অনুগত নয়। তারা স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য পোষণ করেন এবং সুযোগ পেলেই তা ঘোষণা করবেন। গত পাঁচ মাসে বহু বাঙালী কূটনীতিবিদ ও দূতাবাস কর্মচারী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্য ঘোষণা করে বহির্বিশ্বে ইয়াহিয়া চক্রের মিথ্যা প্রচারণার বেলুন ফুটো করে দিয়েছেন। শঙ্কিত ইয়াহিয়া বেছে যে কেবল বাঙালী কর্মচারীদের পাসপোর্টই আটক করা হচ্ছে, বিশ্ববাসীর সে খবর জানতেও আর দেরী হয়নি। দেশ-বিদেশে এই বাঙালী নিধন ও বাঙালী-বিতাড়ন নীতি অব্যাহত রেখেও ইয়াহিয়া চক্র ঢাকায় কেন এক বিশ্বাসঘাতক বাঙালীকে তাঁবেদার হিসাবে লাটের গদিতে বসিয়ে এই অসামরিক শাসনের ভড়ং দেখাচ্ছে? এই প্রশ্নটির জবাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ গত ৫ই সেপ্টেম্বর রাত্রে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত তার ভাষণে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন আসন্ন হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশে অসামরিক শাসন পুনঃপ্রবর্তনের ভাব সৃষ্টির