পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

424 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড ппппп пппппп ппппппп পূর্ববর্তী অধ্যায়গুলোর আলোকে আমরা পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক মর্মান্তিক ঘটনাবলীকে তার যথার্থ পটভূমিকায় দেখতে পারি। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের আগে আওয়ামী লীগ উগ্রপন্থীরা যে সব নৃশংস ও অরাজকতামূলক কার্যকলাপ চালিয়েছে প্রতিশোধমূলক প্রতিক্রিয়া এড়ানোর উদ্দেশ্যে তা প্রচার করা হয়নি । কিন্তু এর ফলে এই ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, ফেডারেল সরকারের ব্যবস্থার লক্ষ্য ছিল একটি গণআন্দোলনকে দাবিয়ে দেয়া । এখন অবশ্য বুঝতে পারা যাচ্ছে যে, সশস্ত্রবাহিনী আইন-শৃংখলা এবং সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যই গিয়েছিলেন । কারণ আওয়ামী লীগের ২৫ দিনব্যাপী অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় আইন-শৃংখলা এবং সরকারের কর্তৃত্ব মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। আবেগমুক্ত মন নিয়ে এই শ্বেতপত্রে দেয়া তথ্যপ্রমাণাদি বিচার করলে পরিষ্কার হয়ে উঠে যে, প্রেসিডেন্ট তাঁর সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়েছিলেন নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দলের মধ্যে একটি মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে । কারণ এ ধরনের মতৈক্য ছাড়া একটা সত্যিকারের ফেডারেল ব্যবস্থা কায়েম করা সম্ভব নয় । তিনি ধৈর্যসহকারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান এবং সরকারের সর্বোপরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে এতটা বিলম্বিত করেন যে কেউ কেউ এখন মনে করছেন যে পরিস্থিতি বিষাদের প্রান্তসীমায় পৌঁছে গিয়েছিলো । শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা অবশ্য ক্রমেই তাদের দাবী বাড়িয়ে যেতে থাকেন। তাঁরা সম্পূর্ণ ভুলে যান যে, আওয়ামী লীগের ৬ দফা অনুসারেও জনগণ তাদের যে রায় দিয়েছেন তা ছিলো একটি ফেডারেশনের অধীনে স্বায়ত্তশাসনের জন্য। আলোচনার শেষের দিকে তাদের খসড়া ঘোষণাপত্রে একটি “কনফেডারেশনের” কথা বলা হয় । কনফেডারেশন হচ্ছে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের একটি জোট। এছাড়াও এই ঘোষণাপত্রে তাদের এই দেশকে ভাগ করার সংকল্পের সুস্পষ্ট আভাস ছিলো। এটা এক দিকে অন্য ফেডারেটিং ইউনিটগুলোর নেতা ও দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলো না । অন্য দিকে, পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি অক্ষুণ্ণ রাখার মৌলিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট যে আইনকাঠামো আদেশ জারী করেন এবং যার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেই আইনকাঠামো আদেশের শর্তাবলীরও এটা ছিলো সুস্পষ্ট লংঘন । আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের সাফল্যের জন্য কতগুলো জিনিসের উপর নির্ভর করছিলেন । তারা মনে করছিলেন যে, আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী দাবী দাওয়া মেনে নেয়া না হলে একদিকে তাঁরা বেসামরিক প্রশাসনকে অচল করে দেবেন এবং অন্যদিকে সশস্ত্রবাহিনীর অনেকগুলো ইউনিটের আনুগত্য নষ্ট করে হিন্দুস্তানের যোগসাজশে এমন একটা বেকায়দা পরিস্থিতির সৃষ্টি করবেন যে তখন তাঁদের দাবী মেনে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। প্রেসিডেন্ট আপোষ-মীমাংসার জন্য সবরকম চেষ্টা চালান । কিন্তু তিনি একটি ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটা রাজনীতিজ্ঞসুলভ কিংবা একটা আপোষমূলক মনোভাবও দেখতে পাননি । কাজেই প্রেসিডেন্ট যে বারবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে প্রয়োজন হলে তিনি দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেবেন, শেষ পর্যন্ত তার কোন উপায় না দেখে তিনি অতীব দুঃখের সঙ্গে সেই সিদ্ধান্তই নিতে বাধ্য হন ।