পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

কিন্তু ধরা হয় নি। কিন্তু ‘মারধোর’ শব্দের দ্বারা মারটাকে সুনির্দিষ্ট সীমার বাইরে ব্যাপ্ত করা হল। যে উৎপাতটা ঘটেছিল তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলো এই শব্দে ইঙ্গিতের মধ্যে সেরে দেওয়া হয়েছে।

 ‘কালিকিষ্টি’ এটা একটা ভঙ্গীওয়ালা কথা। শুধু, ‘কালো’ বলে যখন মনে তৃপ্তি হয় না তখন তার সঙ্গে ‘কিষ্টি’ যোগ করে কালিমাকে আরও অবজ্ঞায় ঘনিয়ে তোলা হয়।

 ভাবনাচিন্তা আপদবিপদ কাটাছাঁটা হাঁকডাক শব্দে অর্থের বিস্তার করে। শুধু ‘চিন্তা’ দঃখজনক, কিন্তু ‘ভাবনাচিন্তা’ বিচিত্র এবং দীর্ঘায়িত।

 স্বতন্ত্র শব্দে ‘আপদ’ কিংবা ‘বিপদ’ বলতে যে বিশেষ ঘটনা বোঝায়, যুক্ত শব্দে ঠিক তা বোঝায় না। ‘আপদবিপদ’ সমষ্টিগত, ওর মধ্যে অনির্দিষ্টভাবে নানাপ্রকার দুর্যোগের সম্ভাবনার সংকেত আছে।

 ‘ধারধোর’ শব্দে ধার করার উপরেও আর কিছ, অস্পষ্টভাবে উদবৃত্ত থাকে। হয়তো, কাউকে ধ’রে পড়া। রূপক অর্থে শব্দ ‘ছাই’ শব্দে তুচ্ছতা বোঝায় যথেষ্ট, এই অর্থে ‘ছাই’ শব্দের ব্যবহার হয়ে থাকে, যেমন: কী ছাই বকছ। কিন্তু ‘ছাইভস্ম কী যে বকছ’, এতে প্রলাপের বহর যেন বড়ো করে দেখানো হয়।

 ‘হাঁড়িকুড়ি’ শব্দ সংক্ষেপে পাকশালার বহ‍ুবিধ আয়োজনের ছবি এনে দেয়। এরকম স্থলে তন্নতন্ন বর্ণনার চেয়ে অস্পষ্ট বর্ণনার প্রভাব বেশি। ‘মামলা-মকদ্দমা’ শব্দটা ব্রিটিশ আদালতের দীর্ঘপ্রলম্বিত বিপত্তির দ্বিপদী প্রতীক। এইজাতীয় শব্দের কতকগুলি নমুনা দেওয়া গেল: মাথামণ্ডু মালমসলা গোনাগ‍ুন্তি চালচলন বাঁধাছাঁদা হাসিতামাশা বিয়েথাওয়া দেওয়াথোওয়া বেঁটেখাটো পাকাপোক্ত মায়াদয়া ছুটোছাটা কুটোকাটা কাঁটাখোঁচা ঘোরাফেরা নাচাকোঁদা জাঁকজমক গড়াপেটা জানাশোনা চাষাভুষো দাবিদাওয়া অদলবদল ছেলেপুলে নাতিপুতি।

১২০