পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

 ‘যেই' শব্দের একটি প্রয়োগ আছে, তাতে ‘মুহূর্তে’ বা ‘ক্ষণে’ উহ্য থাকে, যথা: যেই এল অমনি চলে গেল, যেই দেখা সেই আর মুখে কথা নেই। এখানে ‘যেই আর সেই’ শব্দের পিছনে ঊহ্য আছে ‘ক্ষণে’। অন্যত্র ‘যেই’ বা ‘সেই’ শব্দের প্রয়োগে ঊহ্য থাকে ‘মানুষ’, যেমন: যেই আসকে সেই মার খাবে। ‘যাই’ শব্দের সঙ্গে ঊহ্য থাকে দুটি বিশেষণের দ্বন্দ্ব, যেমন: সে যাই বলুক। অর্থাৎ, এটাই বলুক বা ওটাই বলুক, ভালোই বলুক বা মন্দই বলুক। আর-এক প্রকার প্রয়োগ আছে ‘যেই কথা সেই কাজ', অথাৎ কাজে কথায় প্রভেদ নেই— এখানে ই প্রত্যয় নিশ্চয়ষতা অথে ঝোঁক দেবার জন্যে।

 ‘যে’ অসম্পূর্ণার্থক সর্বনাম বিশেষণ, মানবার্থে তার পূরণ হয় ‘ও’ এবং ‘সে’ দিয়ে। অন্য জীব বা বস্তুর সম্বন্ধে যখন তার প্রয়োগ হয় তখন সেই বস্তু বা জীবের নাম তার সঙ্গে জুড়তে হয়, যেমন: যে পুকুর, যে ঘটি, যে বেড়াল। নির্বস্তুক শব্দেও সেই নিয়ম, যেমন: যে স্নেহ শিশুর অনিষ্ট করে সে স্নেহ নিষ্ঠুরতা।

 কখনো কখনো বাক্যকে অসম্পূর্ণ রেখে ‘যে’ শব্দের ব্যবহার হয়, যেমন: যে তোমার বৃদ্ধি। বাকিটুকু ঊহ্য আছে বলেই এর দংশনের জোর বেশি। বাংলা ভাষায় এইরকম খোঁচা-দেওয়া বাঁকা ভঙ্গীর আরও অনেক দৃষ্টান্ত পরে পাওয়া যাবে।

 মানুষ ছাড়া আর কিছুকে কিংবা সমুহকে বোঝাতে গেলে ‘যে’ ছেড়ে ‘যা’ ধরতে হবে, যেমন: যা নেই ভারতে (মহাভারতে) তা নেই ভারতে। কিন্তু ‘যারা’ শব্দ ‘যা’ শব্দের বহুবচন নয়, ‘যে’ শব্দেরই বহুবচন, তাই ওর প্রয়োগ মানবার্থে। ‘তা’ বোঝায় অচেতনকে, কিন্তু ‘তারা’ বোঝায় মানুষকে। ‘সে’ শব্দের বহুবচন ‘তারা’।

 শব্দকে দুনো করে দেবার যে ব্যবহার বাংলায় আছে, ‘কে’ এবং ‘যে’ সর্বনাম শব্দে তার দৃষ্টান্ত দেখানো যাক: কে কে এল, যে যে এসেছে। এর পূরণার্থে ‘সে সে লোক’ না বলে বলা হয় ‘তারা’ কিংবা ‘সেই সেই লোক’। ‘যেই যেই লোক’ এর ব্যবহার নেই। সম্বন্ধপদে

৯১