পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বালাভাষা-পরিচয়

খাঁ, যেন আহ্মাদে পুতুল। যেন কাত্তিকটি, যেন ডানাকাটা পরী। বাংলায় বিদ্রূপের ভঙ্গীরীতি অত্যন্ত সুলভ।

 ‘তেন’ শব্দের ব্যবহার লোপ পেয়েছে। ‘হেন’ শব্দের অর্থ ‘মতো’ কিংবা ’এইমতো’। এর সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যায় ‘তেন’ শব্দের অথ ‘সেইমতো’। ‘হেন-তেন’ জোড়া শব্দ এখনো চলিত আছে। হেন-তেন কত কী ব’কে গেল: অর্থাৎ, ব’কল কখনো এরকম কখনো সেরকম, অসংলগ্ন বকুনি। প্রাচীন বাংলায় দেখেছি ‘যেন কন্যা তেন বর’। এখানে ‘যেন’ শব্দের ‘যে-হেন’ অর্থ।

 ‘যেন’ শব্দটা ‘হেন’ শব্দের জুড়ি। পদাবলীতে পাওয়া গেছে, ‘যেহ্ন’ (যে-হেন)। বোঝা যায় এই ‘হেন’ শব্দের যোগেই ‘যেন’ শব্দ চেহারা পেয়েছে। আধুনিক বাংলায় ‘যেন’ শব্দটা তুলনা-উপমার কাজেই লাগে, কিন্তু পুরাতন বাংলায় তার অর্থের বিকৃতি হয় নি। তখন তার অর্থ ছিল ‘যেমন’: যেন যায় তেন আইসে, যেন রাজা তেন দেশ।

 ‘হেন’ শব্দটা রয়ে গেছে ভাষার মহদাশ্রয় পদ্যে। কিন্তু ‘সে’ কিংবা ‘এ’ শব্দের যোগে এখনো চলে, যেমন: সে-হেন লোক। এই ‘হেন’ শব্দের যোগে ঐ ‘সে’ শব্দে অক্ষমতা বা অসম্মানের আভাস দেয়। যেমন: সে-হেন লোক দৌড় মারলে। ‘হেন’ শব্দের যোগে ‘এ’ শব্দে অসামান্যতা বোঝায়, যেমন: এ-হেন লোক দেখা যায় না, এ-হেন দুর্দাশাতেও মানুষ পড়ে।

 ‘কেন’র সঙ্গে ‘যে’ যোগ করলে পরিতাপ বা ভর্ৎসনার ভঙ্গী আসে, যেমন: কেন যে মরতে আসা, কেন যে এতগুলো পাস করলে। ‘কী করতে’ শব্দটারও ঐরকম ঝোঁক, অর্থাৎ তাতে আছে ব্যর্থতার ক্ষোভ ৷

 শুধু ‘কী’ শব্দের মধ্যেও এই রকমের ভঙ্গী। এই কাজে ওর সঙ্গে যোগ দেয় ‘ই’ অব্যয়: কী চেহারাই করেছ; কী কবিতাই লিখেছেন, কী সাধুগিরিই শিখেছ। ঐ ‘কী’এর সঙ্গে ‘বা’ যোগ

৯৫