পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে ఫిలి গোপেশ্বর মহাদেবের মন্দিরের অলিন্সে একটি কষ্টপাথরের বৃষ আছে। বৃষটি প্রায় দেড় হাত লম্বা ও এক হাত উচচ । ইহার গলকম্বলে উৎকীর্ণ লিপি হইতে জানা যায় যে সত্যরাজ খান এই বৃষের প্রতিষ্টাতা । বৃষটির কারুকার্য্য অতি সুন্দর। শিবচতুর্দশী উপলক্ষে গোপেশ্বর মহাদেবের মন্দিরের নিকট একটি বিরাট মেলার অধিবেশন হয় | বসুবংশের অভু্যদয়ের পূবেৰ্ব কুলীনগ্রাম সম্ভবতঃ শক্তি উপসনার কেন্দ্র ছিল। আদ্যা জননী শিবানীদেবীর মন্দির ইহার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। মালাধর, লক্ষ্মীকান্ত ও রামানন্দ বস্তুবংশের এই তিন কীৰ্ত্তিমান পুরুষ হইতেই কুলীনগ্রামের নাম উজ্জল হইয়াছে। ইহাদেরই কৃতিত্বে কুলীনগ্রাম তীর্থের গৌরব অর্জন করিয়াছে। বৈষ্ণব সাহিত্যে উল্লিখিত আছে যে বসু রামানন্দকে চৈতন্যদেব " সখা ’ সম্বোধন করিতেন । মদন গোপাল, রঘুনাথ, কৃষ্ণরায়, গোপীনাথ, গোবিন্দ, জগন্নাথ ও ভুবনেশ্বরী প্রভৃতি দেবদেবীর নন্দির বস্তুবংশের অমর কীৰ্ত্তি। রথ ও দোলযাত্রা উপলক্ষে মদন গোপাল, গোপীনাথ ও জগন্নাথ মন্দিরে বিশেষ সমারোহ হয় এবং নানাস্থানে হইতে বহু যাত্রীর সমাগম হইয়া থাকে। জোগ্রাম স্টেশন হইতে একটি আকাশচুম্বী শিবমন্দিরের চুড়া দেখিতে পাওয়া যায়। উহা জলেশ্বর শিবের মন্দির নামে পরিচিত। আনুমানিক দশম শতাব্দীতে এই শিবের প্রতিষ্ঠা হয়। “যোগগ্রাম” হইতে জোগ্রাম নাম হইয়াছে, কেহ কেহ এইরূপ অনুমান করেন। সিঙ্গুর—তারকেশ্বর শাখা লাইনে শেওড়াফুলি ও কামারকুণ্ডু জংশনের মধ্যে অবস্থিত । হাওড়া হইতে ইহার দূরত্ব ২১ মাইল। ইহা একটি বদ্ধিষ্ণু ভদ্রপল্লী। এই স্থানের প্রাচীন নাম সিংহপুর। অনেকে অনুমান করেন যে এই স্থানেই বঙ্গরাজ সিংহবাহুর রাজধানী ছিল। সিংহলের প্রাচীন ইতিহাস “ মহাবংশ ” পাঠে জানা যায় যে সুপ্রদেবী নামে একটি বাঙালী রাজকন্যা যৌবনাবস্থা প্রাপ্ত হইলে সাথ সিংহ নামে এক সাৰ্থপতিকে পতিত্বে বরণ করেন। ইহাদের পুত্র প্রবল পরাক্রান্ত রাজ সিংহবাহু রাঢ়দেশে একটি বিস্তীর্ণ জঙ্গল পরিষ্কার করিয়া সিংহপুর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। মহাবংশে এই রাজ্য “ লাড়রট ' অৰ্থাৎ রাঢ়রাষ্ট্র বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে। সিংহবাহু স্বীয় ভগিনী সিংহশীবলিকে মহিষী করিয়াছিলেন। এই সিংহবাহুর পুত্র বিজয়সিংহ পিতা কর্তৃক নিবৰ্বাসিত হইয়া সাত শত বীর সহচর সমভিব্যাহারে জাহাজে করিয়া তাম্রপণি বা লঙ্কাদ্বীপে উপস্থিত হন এবং উহ! জয় করেন। তদবধি লঙ্কাদ্বীপের নাম হইয়াছে সিংহল। কথিত আছে, বুদ্ধদেব যে দিন দেহত্যাগ করেন, বিজয়সিংহ ঠিক সেই দিনেই লঙ্কাদ্বীপে পদার্পণ করেন। সিঙ্গুরের নিকটবর্তী কতকগুলি উচ্চ স্থান ও জাঙ্গল প্রভৃতি দেখিলে ইহার প্রাচীনত্ব উপলব্ধি করিতে পারা যায় । সিঙ্গুরের বসুমল্লিক বংশ বিশেষ সম্রাস্ত। এই বংশের সুসস্তান পরলোকগত সুরেন্দ্রনাথ মল্লিক, সি আই ই মহাশয় বহু অথব্যয়ে রেল স্টেশনের নিকট স্বীয় পিতার নামে আধুনিক প্রথায় সুসজ্জিত হাসপাতাল ও মাতার স্মৃতিরক্ষাথে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। হরিপাল—তারকেশ্বর শাখা লাইনে কামারকুণ্ড জংশন ও তারকেশ্বরের মধ্যে অবস্থিত। হাওড়া হইতে দূরত্ব ২৮ মাইল। ইহাও একটি প্রাচীন স্থান। ইহার পুরাতন নাম সিমুল। “দিগ্বিজয় প্রকাশ ” নামে প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে নৃপতি কুলপালের হরিপাল ও