পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নাগপুর রেলপথে כסכ স্থানের প্রসিদ্ধি ছিল। এখনও এই স্থানে রেশমের কারবার আছে। কেশিয়াড়ীর সবর্বমঙ্গলা মন্দির নিকটস্থ মঙ্গলমাড়ো নামক পল্লীতে অবস্থিত। এই মন্দিরটি একটি বিশেষ দ্রষ্টব্য বস্তু। ইহার সিংহদ্বারের সম্মুখে একটি কৃষ্ণপ্রস্তর নিৰ্ম্মিত মস্তৃণদেহ বৃষের মুক্তি আছে। বৃষটির সমুখের দুইটি পী ভগ্ন। ইহা কালাপাহাড়ের অত্যাচারের চিহ্ন বলিয়। কথিত। মন্দিরের সোপানের দুই পার্শ্বে দুইটি ছয় হাত উচচ প্রস্তরনিৰ্ম্মিত সিংহের মুক্তি ও সম্মুখে বারটি খিলানযুক্ত “বারদুয়ারী ” নামে একটি নাটমন্দির দৃষ্ট হয়। বারদুয়ারীর পরে জগমোহন মন্দির, এখানে যাবতীয় পূজাপাঠ হইয়া থাকে। .এখানে কৃষ্ণপ্রস্তর নিৰ্ম্মিত একটি গণেশমূৰ্ত্তি, খড়গ ও ত্রিশূলধারী মহাকাল মুক্তি ও ত্রিশূলহস্ত কালভৈরবীর মুক্তি আছে। জগমোহনের ভিতর দিয়া মূলমন্দিরে যাইতে হয়। উচচ পাদপীঠের উপর প্রস্তর নিৰ্ম্মিত সর্বমঙ্গলা মুক্তি অবস্থিত। দেবীর মুখমণ্ডল সিন্দুরলিপ্ত, অঙ্গে বহু স্বর্ণালঙ্কার, দক্ষিণপদ বেদীর নিম্নদেশস্থ সিংহের উপর এবং বামপদ স্বীয় দক্ষিণ উরুর উপর সংস্থাপিত। দেবীর উভয় পাশ্বে জয়া ও বিজয়ার প্রস্তর মূৰ্ত্তি। বেদীর বামপাশ্বে একটি ছোট মঞ্চের উপর সবর্বমঙ্গলা, জয় ও বিজয়ার পিত্তল নিৰ্ম্মিত ভোগমুক্তি অবস্থিত। সবৰ্বমঙ্গলাদেবীর ভোগমুক্তি বিজয়মঙ্গলা নামে অভিহিত। পবেবাপলক্ষে এই মুক্তিত্রয়কে জগমোহন মন্দিরে আনিয়া আচৰ্চনা করা হয়। সবর্বমঙ্গলার মন্দিরে বৌদ্ধপ্রভাবের চিহ্ন যথেষ্ট পরিলক্ষিত হয়। কালভৈরবের মুক্তিটির গঠন-প্রণালী বুদ্ধযুক্তির অনুরূপ। অন্যান্য স্থানে পশুবলি যেরূপ দেবীর সম্মুখভাগে হইয়া থাকে, এখানে কিন্তু সেরূপ নহে। মূলমন্দিরের দক্ষিণদিকে একটি প্রাচীর বেষ্টিত স্থানে লোক চক্ষুর অগোচরে এখানে বলির কার্য্য সমাধা হয়। ইহাও বৌদ্ধপ্রভাবের লক্ষণ বলিয়া অনুমিত হয়। বিজয়মঙ্গলা মুক্তির পাদপীঠের ও জগমোহনের দেউলসংলগ্ন প্রস্তরলিপি হইতে জানা যায় ৰে ১৬০৪ খৃষ্টাব্দে (১৫২৯ শকাব্দে) জমিদার রঘুনাথ শৰ্মার পুত্র চক্ৰধর ভূঞা দেবীমন্দির ও জগমোহনের প্রতিষ্ঠা করেন। কৰ্ম্মকার রঘুনাথ কামিলা বিজয়মঙ্গলা মুক্তির ও রাজমিস্ত্রী বামুরাম জগমোহন মন্দির নির্মাণ করেন। বারদুয়ারীর প্রস্তরফলক হইতে জানা যায় যে ১৬১০ খৃষ্টাবেঙ্গ সুন্দর দাস নামক জনৈক রাজকর্মচারী রাজমিস্ত্রি বনমালী দাসের দ্বারা উহা নিৰ্মাণ করান। মুঘল শাসনকালে কেশিয়াড়ীতে একটি তহশীল কাছারি থাকায় বহু মুসলমান এখানে ৰাস করিতেন। তাহারা যে অংশে বাস করিতেন তাহা আজও “ মোগলপাড়া ’ নামে পরিচিত। একটি প্রাচীন মসজিদের প্রস্তরফলক হইতে জানা যায় যে উহা সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। নিকটস্থ “তল কেশিয়াড়ী ” গ্রামে বাদশাহ শাহ্ আলমের আমলে নিৰ্ম্মিত অপর একটি মসজিদ আছে। , - কেশিয়াড়ির তিন মাইল দূরে কুরুমবেড়া দুর্গ নামে একটি প্রাচীন ভগ্ন দুর্গ আছে। দুর্গের প্রাঙ্গনে একই প্রাচীর বেষ্টনীর মধ্যে একটি মন্দির ও একটি মসজিদ জীর্ণ অবস্থায় দণ্ডায়মান রহিয়াছে। খড়গপুর জংশন হইতে বাংলা নাগপুর রেলপথের প্রধান লাইন টাটানগর, চক্ৰধরপুর প্রভূতি হইয়া নাগপুর গিয়াছে এবং একটি শাখা মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া অভিমুখে ও অপরটি কটক, ভুবনেশ্বর, পুরী ও মাদ্রাজের দিকে গিয়াছে। শেষোক্ত শাখাপথে দাঁতন মেদিনীপুর জেলার তথা বাংলার শেষ স্টেশন ; খড়গপুর ও স্নাতনের মধ্যে নারায়ণগড় ও কাথি রোড উল্লেখযোগ্য স্টেশন।