পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্বববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ , $& এখানেই বাস করিতেন। এই গ্রামের দুইদিকে গৌরী ও সোনারাই নামে দুইটি নদীর চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। সোনারাই নদীর মধ্যে একটি উচু ঢিবি ও কিনারা হইতে তথায় যাইবার জন্য একটি সেতুর ভগ্নাবশেষ আছে। অনেকে বলেন যে নদীর মধ্যে পদ্মা বা মনসা দেবীর একটি মন্দির ছিল। চাঁদনীয়া গ্রামের দক্ষিণে কালীদহ সাগর নামক বিল অবস্থিত। চাঁদনীয়ার পর্বেই করতোয় কুলে শিবগঞ্জ মুসলমান যুগে একটি সামরিক ঘাট ছিল। ইহা একটি বন্দর। শিবগঞ্জ থানার অস্তগত ইহার নিকটেই করতোয় কুলে কীচক একটি প্রসিদ্ধ বন্দর। প্রবাদ মহাভারতের কীচক এই স্থানে বাস করিতেন। ইহার ৬ মাইল উত্তরে রংপুর জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার অন্তর্গত বিরাট নামক স্থানে বিরাট রাজার বাড়ী ছিল বলিয়া কথিত। মহাস্থান হইতে প্রায় ২০ মাইল উত্তরে শালদহ নামক একটি প্রাচীন স্থান আছে। এই গ্রামেও বহু উচু ঢিবি, প্রাচীন ইষ্টক, দগ্ধ মৃত্তিক আচ্ছাদিত প্রাস্তর ও কয়েকটি লুপ্তপ্রায় প্রাচীন দীঘি দৃষ্ট হয়। অনেকে অনুমান করেন যে ক্ষেীণীনায়ক ভৗম এই স্থানের অধিবাসী ছিলেন। - মহাস্থানের নিকটবৰ্ত্তী গ্রামগুলির গোকুল, বৃন্দাবন পাড়া ও মধুরা প্রভূতি নাম ভ্রমণকারী মাত্রেরই বিসময় উৎপাদন করে। শ্রীকৃষ্ণের প্রতিদ্বন্দ্বী পুড়িরাজ বাসুদেবের সময় হইতেই যে এই স্থানগুলির এইরূপ নামকরণ হইয়াছে, এইরূপ অনুমান যদি কেহ করেন, তবে তাহা নিতান্ত অসঙ্গত নহে বলিয়াই মনে হয় | মহাস্থানের নিকট করতোয়া তীরে আরোড়া গ্রামে “রসকদম্ব” রচয়িত কৰি বল্লভের জন্মস্থান। তাহার গ্রন্থ ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দে সমাপ্ত হয়। ইহাতে আদি, সূত্র, বৈভব, হাস্য, প্রেম প্রভৃতি রসের অবলম্বনে ২২টি অধ্যায় আছে এবং বৈষ্ণবতত্ত্ব অবলম্বনে ইহা রচিত। শেরপুর-বগুড়া হইতে শেরপুর দক্ষিণে ১০ মাইল দুর। বগুড়া ও শেরপুরের মধ্যে মোটরবাস যাতায়াত করে। শেরপুর বগুড়া জেলার দ্বিতীয় শহর এবং একটি প্রসিদ্ধ পুরাতন স্থান। মুঘল যুগে এই স্থানে একটি প্রত্যন্ত দুগ ছিল এবং এই স্থানের নাম ছিল শেরপুর মুরচা। প্রাচীন দুগের চিহ্ন এখনও কিছু কিছু দেখিতে পাওয়া যায়। আকবরনামা ও আইন-ই-আকবরীতে ইহার উল্লেখ আছে। বাংলার ভূস্বামিগণের বিদ্রোহ দমন করিতে আসিয়া মুঘল সেনাপতি মহারাজা মানসিংহ কিছুকাল শেরপুরে বাস করিয়াছিলেন এবং এই স্থানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করাইয়াছিলেন। উহার ধংসাবশেষ এখনও বর্তমান আছে। শেরপুরে খানরা মসজিদ ও বলেগী সদর জাহান মসজিদ নামে দুইটি পুরাতন মসজিদ দেখিতে পাওয়া যায়। শেষোক্ত মসজিদৃটি ১৫৭১ খৃষ্টাব্দে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে নৰাৰ নিজৰ্জ মুরাদ ৰী কত্ত্বক নিম্বিত। শেরপুর শহরের বাহিরে জীর্ণ খেরুয়া মসজিদের শিলালেখাট সুন্দর। শেরপুর শহরে তুরকা শহিদের শিরে-মোকাম ও শহরের বাহিরে বড় মোকাম নামে দুইটি দরগাহ বর্তমান। প্রবাদ রাজা বল্লাল সেনের সহিত যুদ্ধে পীর তুরকান সাহেব নিহত হন। যে স্থানম্বয়ে তাহার শির ও বড় পড়িয়াছিল তথায় দুটি দরগাহ স্থাপিত হয়। গাজি মিঞা, হটলা প্রভৃতি আরও কয়েকটি পীরের আস্তান। এখানে আছে। প্রতি বৎসর জৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রবিবারে গাজি মিঞার বিবাহোৎসৰ ধুম ধামের সহিত সম্পন্ন হয়। -