পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসাম বাংল। রেলপথে ఏty) বুঝিলেন যে তাঁহার ভাগিনেয় আধাৰিক শক্তিতে তাঁহারই সমান হইয়াছেন। তখন ধৰ্ম্ম প্রচার্থ তাহাকে হিন্দুস্থানের দিকে প্রেরণ করিলেন এবং প্রস্থানের সময়ে নিজ সাধনার স্থান হইতে এক মুঠা মাটি শাহজলালের হাতে দিয়া বলিয়া দিলেন যে ইহা যত্নে রাখিবে এবং যাহাতে ইহার বণ, গন্ধ ও স্বাদ বিকৃত না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখিবে এবং যে স্থানে ঠিক এইরূপ মাটি পাওয়া যাইবে সেইখানে ইহা ছড়াইয়া দিয়া বাস করবে। শাহজালাল এই মাটি যন্ত্রের সহিত লইয়া বার জন শিষ্যসহ হিন্দুস্থান অভিমুখে যাত্রা করিলেন। একজন শিষ্যের কাজ হইল পথে যাইতে যাইতে নানাস্থানের মাটি আস্বাদ করিয়া পরীক্ষা করা। এই ব্যক্তির নাম হইল চাস্নি পীর। শাহজলাল প্রথমে জন্মস্থান এমন-এ যাইলেন। কথিত আছে এমনের রাজা তাঁহাকে পরীক্ষা করিবার জন্য বিষ মিশ্রিত শরবৎ পান করিতে দেন। শাহজলাল রাজার মতলব বুঝিতে পারিয়া বলিলেন “ফকিরের পক্ষে ইহা অমৃত কিন্তু দাতার পক্ষে ৰিম৷ ” এই বলিয়া শরবৎ পান করিলেন। এদিকে রাজা হঠাৎ প্রাণত্যাগ করিলেন। রাজপুত্র শেখ আলি বৈরাগ্য গ্রহণ করিয়া শাহজলালের সঙ্গ লইলেন। পথে শিষ্য সংখ্যা বাড়িতেই লাগিল। শ্রীহট্ট শহরে যখন পৌছিলেন তখন তাহার শিষ্য সংখ্যা ৩৬০ জন হইয়াছিল। প্রধানতঃ ইহাদের সাহায্যে শ্রীহট বিজিত হইয়াছিল বলিয়া শ্রীহট “ তিন শ ঘাট আউলিয়ার মুলুক ? বলিয়া পরিচিত। . শ্রীহট্টের মাটি পরীক্ষা করিয়া চাস্নিপীর দেখিলেন ইহা বণে, স্বাদে ও গন্ধে পীর আহম্মদ কবীর প্রদত্ত মাটির সমতুল্য। শাহজলালকে ইহা জানাইলে তিনি বুঝিলেন এই স্থানই তাঁহার কৰ্ম্মক্ষেত্র। শাহজলাল একটি নির্জন ও মনোরম স্থানে মসজিদ নিৰ্মাণ করাইয়া ধৰ্ম্মসামনে মনোনিবেশ করিলেন। নিকটস্থ নানাস্থানে তাহার সঙ্গী পীরগণকে পাঠাইয়া মুসলমান ধৰ্ম্মপ্রচার করিতে লাগিলেন। শ্রীহটে ৩০ বৎসর বাসের পর বামটি বৎসর বয়সে তিনি দেহত্যাগ করেন। তাহার মসজিদের পাশেই দেহ সমাহিত করা হয়। শাহজলালের দরগাহ হিন্দু ও মুসলমান সকলেরই মান্য এবং ইহার জন্যই শ্রীহট্ট শহর একটি প্রধান মুসলমান তীর্থে পরিণত হইয়াছে। সরকার এই দরগার জন্য মাসিক একশত টাকা ব্যয়ভার বহন করেন। শাহজলালের দরগাহে কতকগুলি প্রস্তর লিপি আছে। ইহার বৃহৎ মসজিদটি সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। শাহজলাল কর্তৃক আনীত একটি উট পার্থীর ডিম, তাহার “ জুলফিকার ” নামক তলোয়ার, কাষ্ঠপাদুকা, নমাজের মোসল্লা বা চৰ্ম্মাসন বহু যত্বে দরগাহে রক্ষিত হইয়াছে। দরগাহে একটি বৃহৎ তামার ডেগ আছে, উহাতে ১০/১২ মণ চাউলের অন্ন পাক করা যায় ; ইহার গাত্রে যে ইরাণী কবিতা লিখিত আছে তাহাতে ১১১৫ হিজরী ১৭০৭ খৃষ্টাব্দ খোদিত আছে। কথিত আছে যে ইহা আওরঙ্গজেব প্রেরণ করিয়াছিলেন। এই দরগাহে শাহজলালের সমাধি ব্যতীত এমন-রাজকুমার শাহাজাদ শেখ আলি প্রভৃতি আরও অনেকের সমাধি আছে। শাহজলালের অনুচরবর্গের অনেকের সমাধি শ্রীহট্ট শহরে অবস্থিত। শহরের গোয়াইপাড়ায় চাসনি পীরের কবর। সম্রাট আকবরের সময় হইতে শ্রীহট্ট শাসনের ভার আমিল উপাধিধারী কর্মচারীদের উপর ন্যস্ত ছিল। সাধারণে ইহাদের নবাব বলিত। আমিলদের শাসনকাল সাধারণতঃ অল্প ছিল। হরকৃষ্ণ নামক একজন হিন্দুও আমিলপদে অধিষ্ঠিত হইয়াছিলেন। ইনি নবাব হরকিষণ দাস মনসুর-উল-মুলক বাহাদুর নামে পরিচিত হন। হরকৃষ্ণের শাসনকাল অতি অল্প হইলেও তিনি সেই