পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলায় ভ্রমণ দ্বাদশবর্ষ বাস করেন। উত্তরকালে রাঢ়দেশ দুই অংশে বিভক্ত হইয়াছিল । অজয়নদের উত্তরপ্রদেশ উত্তররাঢ় এবং দক্ষিণ বিভাগ দক্ষিণরাঢ় নামে পরিচিত ছিল । গৌড় নামের প্রসিদ্ধি—এক সময়ে পূর্ববঙ্গ ছাড়া বাংলার প্রায় অধিকাংশ ভূভাগ গৌড় নামে পরিচিত ছিল । রাজধানী গৌড়ের সমৃদ্ধি হইতেই সমগ্র দেশ গোড় নামে আখ্যাত হইয়াছিল। পাণিনিসূত্র হইতে আরম্ভ করিয়া প্রাচীন বঙ্গীয় কবিগণ, মহাকবি ভারতচন্দ্র, মাইকেল মধুসূদন, এমন কি কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথ পর্যান্ত বাংলা দেশকে বুঝাইতে গৌড় শব্দের প্রয়োগ করিয়াছেন। বিভিন্ন যুগের বিভাগ—বৰ্ত্তমানে বাংলাদেশ বলিতে যে ভূভাগকে বুঝায়, তাহার সমগ্র এবং তৎসন্নিহিত কোন কোন অঞ্চল পূৰ্ব্বকালে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন নামে প্ৰসিদ্ধিলাভ করিয়াছিল। মহাভারতের যুগে বাংলাদেশ মোদাগিরি, পুণ্ড, কৌশিকীকচ্ছ, স্বহ্ম, পমুক্ষ, বঙ্গ ও তাম্রলিপ্ত প্ৰভৃতি বিভিন্ন স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল । গুপ্তসম্রাট চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে বঙ্গরাজ্য মগধ সাম্রাজ্যের অন্তভুক্ত হয়। অতঃপর সপ্তম শতাব্দীতে কর্ণসুবর্ণরাজ শশাঙ্ক বঙ্গরাজ্যের পুনরুদ্ধার করেন। শশাঙ্কের রাজত্বকালে প্ৰসিদ্ধ চৈনিক পৰ্য্যটক যুয়ান চোয়াঙ, ভারত পর্য্যটন করেন । তাহার লিখিত বিবরণ হইতে জানা যায় যে তৎকালে বঙ্গরাজ্য কামরূপ, পুণ্ডবৰ্দ্ধন, কর্ণসুবর্ণ, সমতট ও তাম্রলিপ্তি এই পাচভাগে বিভক্ত ছিল। শশাঙ্ক কামরূপ জয় করিয়া নিজ রাজ্যের অন্তভূক্ত করিয়াছিলেন । সেনবংশীয় প্ৰসিদ্ধ নৃপতি বল্লালসেন মিথিলা জয় করেন । তাহার সময়ে বঙ্গরাজ্য মিথিলা, রাঢ় (পশ্চিম বঙ্গ), বরেন্দ্র (উত্তর বঙ্গ), বগড়ি বা বকদ্বীপ (মধা ও দক্ষিণ বঙ্গ) ও বঙ্গ (পূৰ্ব্ব বঙ্গ) এই পাঁচ অংশে বিভক্ত ছিল । মুসলমান শাসনকালে মুঘলযুগে সুবে বাংলা সাতগা, খলিফাতাবাদ, মামুদাবাদ, ফতেহাবাদ প্রভৃতি আঠারটি সরকার বা বিভাগে বিভক্ত হইয়াছিল । বৰ্ত্তমানে বাংলাদেশ বদ্ধমান, প্ৰেসিডেন্সি, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম এই পাঁচটি বিভাগে বিভক্ত। এই পাচ বিভাগে মোট ১৭টি জেলা আছে । এই সকল জেলা খাস, ইংরেজ সরকারের অধীন । ইহা ছাড়া উত্তরবঙ্গে কোচবিহার ও বাংলার পূৰ্ব্বসীমান্তে ত্রিপুরা এই দুইটি দেশীয় রাজা আছে। বৰ্ত্তমান আসাম ও বিহার প্রদেশের সহিত বাংলার কিছু কিছু অংশ যথা শ্ৰীহট্ট, কাছাড়, গোয়ালপাড়া, মানভূম জেলা ও সিংহভূমের ধলভূম পরগণা পভৃতি সংযুক্ত আছে । সীমা ও বর্গফল বর্তমান রাষ্টিক বাংলার উত্তরে নেপাল, সিকিম, ভুটান ও আসামের গোয়ালপাড়া জেলা এবং গারো পাহাড় ; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ; পশ্চিমে বিহার ও ওড়িষ্যা; এবং পূৰ্ব্বদিকে আসামের শ্ৰীহট্ট জেলা ও লুসাই পাহাড়। বাংলাদেশ উত্তর দক্ষিণে লম্বা। ইহার সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক দৈর্ঘ্যের পরিমাণ প্রায় চারি শত মাইল। পূৰ্ব্ব-পশ্চিমে ইহার সর্বাপেক্ষ অধিক বিস্তৃতি প্রায় ৩৭৫ মাইল । ইহার সমগ্র পরিমাণফল প্রায় ৮৩ হাজার বর্গ মাইল। । la