পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

2 পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ՖԵr(t গরতের অন্যান্ত স্থানেও “চক্ৰতীৰ্থ” এই নামের তীর্থ দেখিতে পাওয়া যায়। পুরী, কাশী, ভাস ও বৃন্দাবনেও এক একটি চক্রতীৰ্থ আছে। এতদঞ্চলের অধিবাসিগণের বিশ্বাস য পুরাণ বর্ণিত চক্ৰতীর্থ ছত্রভোগেই অবস্থিত। র্তাহারা বলেন যে গঙ্গা, সঙ্কেত মাধব, অন্ধ লিঙ্গ শিব ও ত্রিপুরাসুন্দরী শক্তি,—এই চতুৰ্বাহ-মহাশক্তির অধিষ্ঠানের জন্য প্রাচীন vত্রভোগই প্রকৃত চক্ৰতীর্থ। পুরাণে বণিত আছে যে দৈত্যগুরু শুক্রাচাৰ্য্য কৰ্ম্মফলে অতি দুৰ্গতিপ্রাপ্ত হইয়া মহাপাতকের ভাগী হন । পুথিবীর যাবতীয় তীর্থ পৰ্য্যটন করিয়াও র্তাহার পাপক্ষয় হইল না। তখন শিবের নির্দেশমত চক্রতীর্থে স্নান করিয়া তিনি মহাপাতক হইতে মুক্তিলাভ করেন। কথিত আছে, শুক্রাচার্য্য যে দিন এই স্থানে স্নান করেন, সে দিন নন্দ তিথির সহিত শুক্রবারের সংযোগ ঘটিয়াছিল। এই বিশেষ যোগের নাম ভৃগুনন্দা । এখনও যদি চৈত্র মাসের শুক্ল প্রতিপদ তিথি শুক্রবারে হয় তাহা হইলে এখানে যাত্রীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়। নন্দ স্নান উপলক্ষে বড়াশী-মাধবপুরে অনূন ১৫২০ হাজার যাত্রীর সমাবেশ হয় এবং সপ্তাহকাল স্থায়ী একটি বিরাট মেলা বসে। মথুরাপুর রোড স্টেশন হইতে মেলার স্থান পৰ্য্যস্ত মোটর বাস চলে । নন্দার পুকুর হইতে প্রায় আধ মাইল পশ্চিমে মাধবপুর গ্রামে জনৈক ব্রাহ্মণের পর্ণকুটিরে “সঙ্কেত মাধব” বিগ্রহ আছেন। এই চতুভূজ বিষ্ণুমূৰ্ত্তিটি অতি সুন্দর ও ব্রহ্মশিলা বা কষ্ঠিপাথরের দ্বারা নিৰ্ম্মিত। ইহার কোন মন্দির নাই। ছত্রভোগের ত্রিপুরাসুন্দরী মূৰ্ত্তিও অতি সুন্দর। এখানে স্নান যাত্রার সময়ে বহু যাত্রীর সমাগম হয়। কেহ কেহ বলেন যে ত্রিপুরাসুন্দরী একটি শক্তিপীঠ, বড়াশী গ্রামের বদরিক নাথ মহাদেব ইহার ভৈরব । নন্দ পুষ্করিণী হইতে সামান্ত দূরে গঙ্গার খাতের অপর পারে খাড়ি নামক গ্রামে “নারায়ণী” নামে এক বিখ্যাত দেবীমূৰ্ত্তি আছেন। এই দেবী সিংহবাহিনী, ত্রিনেত্র, দ্বিভূজা ও পীতবর্ণ। নন্দ স্নানের যাত্রিগণ এই দেবীকেও দর্শন করিয়া থাকেন। নারায়ণী দেবীর মন্দিরের অদূরে দক্ষিণরায়ের একটি ক্ষুদ্র মন্দির আছে। ধপধপির দক্ষিণরায়ের ন্যায় এই মুক্তিটিরও যোদ্ধবেশ, এবং ইহার হাতেও বন্দুক আছে। এই সকল স্থান প্রচীনকালে হাতিয়াগড় রাজ্যের অন্তভুক্ত ছিল । প্রাচীনকালে ছত্রভোগের নিকটে গঙ্গার বহু শাখা ছিল এবং এই স্থানের অনতিদূরে সাগর সঙ্গম ও কপিলাশ্রম অবস্থিত ছিল। চৈতন্যভাগবতে বর্ণিত আছে, “সেই ছত্রভোগ গঙ্গা হই শতমুখী । * বহিতে আছেন সৰ্ব্ব লোকে করি সুখী ॥” সুন্দরবন অঞ্চলের নদী নালাতে এখনকার দিনেও যে অবস্থা, চারি শত বৎসর পূৰ্ব্বেও যে ঠিক সেরূপ ছিল, চৈতন্যভাগবত হইতে উদ্ধত নিম্নলিখিত শ্লোকগুলি হইতে তাহা বুঝতে পারা যায়। ছত্রভোগ হইতে শ্রীচৈতন্যদেবের নৌকা ছাড়িবার পর, তাহার আদেশে তাহার প্রিয় সহচর মুকুন্দ কীৰ্ত্তন গান আরম্ভ করিলেন, “অবুধ নাবিক বলে, হইল সংশয়। বুঝিলাম আজি আর প্রাণ নাহি রয়।