পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ২১৭ ষাটগুম্বজরোড–কলিকাতা হইতে ১২৬ মাইল দূর। স্টেশন হইতে প্রায় দুই মাইল দূরে ইতিহাস বিশ্রুত খান জাহান আলির দরগা ও ষাটগুম্বজ মসজিদ অবস্থিত । র্যাহারা ঘোড়ার গাড়ী বা মোটরযোগে ষাটগুম্বজে যাইতে ইচ্ছুক, তাহাদের বাগেরহাট হইতে যাওয়াই সুবিধা । পঞ্চদশ শতাদ্বীর মধ্যভাগে উলুগ-খা-জাহান নামক একজন মুসলমানধৰ্ম্ম প্রচারক সুন্দরবনের বনাঞ্চল পরিষ্কার করিয়া তথায় হাবেলী নামে একটি শহরের প্রতিষ্ঠা করেন। যশোহর খুলনার বহু স্থানে তাহার নিৰ্ম্মিত মসজিদ ও দীঘি দেখিতে পাওয়া যায়। র্তাহার একদল বেলদার সৈন্য ছিল ; তাহাদের কাজ ছিল পথের দুই পার্শ্বে বড় বড় পুষ্করিণী খনন করিয়া লোকের জলকষ্ট দূর করা । জনসাধারণের নিকট ইনি “খাঞ্জালি” নামে সুপরিচিত। ঠাকুর দীঘি নামক একটি প্রকাণ্ড জলাশয়ের তীরে উচ্চ ভূমির উপর খান জাহান আলির সুন্দর সমাধি সৌধটি অবস্থিত। ইহার দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট ও উচ্চতা ২৫ ফুট, ইহার ছাদে একটি মাত্র গুম্বজ আছে। এই সৌধের ভিতর প্রস্তর নিৰ্ম্মিত বেদীর উপর খান জাহানের কবর দেখিতে পাওয়া যায়। কবরের প্রস্তর গাত্রে আরবী ভাষায় আশীৰ্ব্বাদ খোদিত আছে। ইহার দক্ষিণদিকে একটি ত্রিকোণের মধ্যে লিখিত আছে যে সুমহান খান জাহানের কবরটি নন্দন কাননের অংশ। ইহার তারিখ ৮৬৩ হিজরার ২৬শে জিলহিজ্জ বা ২৩শে অক্টোবর ১৪৫৯ খৃষ্টাব্দ । সমাধিসৌধের পাশ্বে একটি ছোট মসজিদ আছে এবং নিকটেই পীর খান জাহানের প্রধান চেলা মহম্মদ তাহির বা পীর আলির সমাধি অবস্থিত। প্রবাদ, মহম্মদ তাহির পূর্বে ব্রাহ্মণ ছিলেন। মুসলমান হওয়ার পর তিনি ইসলাম ধৰ্ম্ম প্রচারের জন্য বিশেষ উদ্যমশীল হন এবং ঐকান্তিক ধৰ্ম্মনিষ্ঠার জন্য “পীর আলি” আখ্যা লাভ করেন। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই “পীর আলি” বা পীরালি নামে একটি শ্রেণী দৃষ্ট হয়। মহম্মদ তাহির মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণের পূৰ্ব্বে যে পুত্রসন্তান লাভ করিয়াছিলেন তিনিই হিন্দু পীরালি সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষ বলিয়া কথিত । বাংলার বৃহৎ দীঘি গুলির মধ্যে ঠাকুর দীঘি অন্যতম। জনশ্রুতি যে এই দীঘি খনন কালে ইহার মধ্য হইতে একটি দেববিগ্রহ আবিষ্কৃত হয় বলিয়া ইহার নাম “ঠাকুর দীঘি” হয়। ইহার বাধাঘাটের ভগ্নাংশ আজিও বিদ্যমান আছে। এই দীঘির মধ্যে কতকগুলি বড় বড় কুমীর বাস করে। সাধারণতঃ ইহারা মানুষকে হিংসা করে না এবং দরগার ফকিরগণের আহবানে কিনারার নিকট আসিয়া তাহাদের হাত হইতে খাদ্যাদি গ্রহণ করে। এই গুলি খান জাহান আলির সময়কার কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামক ছটি কুমীরের সন্তান সন্ততি বলিয়া কথিত; খান জাহান আলি এই নামে ডাকিলে তাহার নিকট আসিয়া তাহার হাজির হইত, তাহাদের বংশধরগণ আজও এই নামে সাড়া দিয়া থাকে। প্রতি বৎসর চৈত্র পূর্ণিমার দিন খান জাহান আলির মৃত্যু তিথি উপলক্ষে ঠাকুর দীঘির পাড়ে ও যাটগুম্বজ মসজিদে খুব বড় মেলা হয়। খান জাহানের দরগা হইতে প্রায় এক মাইল দূরে স্থবিখ্যাত ষাটগুম্বজ মসজিদ অবস্থিত। ইহার নাম ষাটগুম্বজ হইলেও ইহার ছাদে প্রতি শ্রেণীতে সাতটি করিয়া এগারটি শ্রেণীতে মোট ৭৭টি গুম্বজ আছে। মধ্যকার শ্রেণীর গুম্বজগুলি চতুষ্কোণ বিশিষ্ট, অপর গুলির আকৃতি গোলাকার। এই বিশাল মসজিদের চতুর্দিকের প্রাচীর প্রায় ৯ ফুট