পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV বাংলার পুরনারী তিনি উচ্চকুলসম্বুতা মেয়ে হইয়া রাজসভায় তাহার অভিযোগ উচ্চারণ করিবেন কিরূপে ? প্ৰগলভার মত তিনি কি কারকুণের জঘন্য চেষ্টার সকল কথা এমন বিশিষ্ট সভায় বলিতে পারেন ? অথচ আত্মপক্ষ সমর্থনে সেই সকল কথা একরূপ অপরিহাৰ্য্য । কমলা তাহার অভিযোগে নিজের কথা কিছুই বলেন নাই, অপরের সাক্ষ্যেও যতটা প্ৰমাণ দেওয়া হইয়াছে, তাহাতে সেই সকল ঘূন্য কথার উল্লেখমাত্র নাই। কারকুণ যে প্ৰণয়-পত্ৰ খানি লিখিয়াছিল, সেই পত্ৰখানি প্রথমত প্ৰদৰ্শিত হইল, তাহাতেই কারকুণের চরিত্রের কথা সভায় বিদিত হইল। তারপরে চিকন গোয়ালিনীর ভাঙ্গা দাতের প্রমাণে এই সাব্যস্ত হইল, যে সেই অশিষ্ট প্ৰস্তাব ও চিঠিখানি লইয়া কমলার কাছে যাওয়াতে তিনি তাহাকে উচিত শাস্তি ও শিক্ষা দিয়াছেন । আদি সাদির সাক্ষ্যে প্ৰমাণ হইল, কমলা কোন দুষ্ট লোকের সঙ্গে গৃহত্যাগ করেন নাই, মাতার সঙ্গে মাতুললয়ে গিয়াছেন। তাহার পর মাতুলের চিঠিখানি উপস্থিত করা হইলে সকলে বুঝিতে পারিলেন, কারকুণ তাঁহাকে গৃহ হইতে তাড়িত করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, মাতুলালয় হইতে কলঙ্কের কালিমা মাথায় লেপিয়া তাহাকে একেবারে পথে আনিয়া নিতান্ত নিরাশ্রয়ার উপর আরো অত্যাচার চালাইবেন, এই তাহার মনোভাব । মহিষালের সাক্ষ্যে প্ৰমাণিত হইল, কোন দুষ্ট লোক তাহাকে ফুসলাইয়া মাতুল গৃহ হইতে লইয়া যায় নাই। বৃদ্ধ মহিষাল তাহাকে নির্জন হাওরের পথে যে ভাবে পাইয়াছিল। তাহাতে তঁহার একনিষ্ঠ সরল চরিত্র, চরম দুৰ্দশা ও নিতান্ত নিরপরাধের প্রমাণ উপলব্ধি হইল। ইহার পরে রাজকুমার যাহা বলিলেন, তাহাতে বুঝা গেল, মহিষালের গোয়াল ঘরে কিরূপে পঙ্কের মধ্যে পঙ্কজের মত তিনি এই পবিত্রতা ও সৌন্দৰ্য্যের খনির আবিষ্কার করিয়াছিলেন। এই সত্য-বৰ্ণনা ও উজ্জ্বল সাধুত্বের মূৰ্ত্তি সভা সমক্ষে প্রকটত হওয়ার পর কারকুণের ষড়যন্ত্র এমনভাবে ধরা পড়িল যে তৎসম্বন্ধে কোন দ্বিধার অবকাশ রহিল না। রাজসভার ভাব কমলার জন্য করুণায় ভরপুর হইয়া গেল ।