পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্রাবতী ܓܠ� কিন্তু সে কথা পত্ৰে ফুটিল না। নিজ কক্ষে বসিয়া তাহার আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেবের নিকট সে করযোড়ে বলিল :- “জয়চন্দ্ৰকে আমার স্বামী করিয়া দাও, আমার কোন দুঃখই দুঃখ বলিয়া মনে হইবে না, আমার জন্ম সার্থক হইবে, জীবন ধন্য হইবে। চন্দ্ৰ সূৰ্য্যকে সাক্ষী করিয়া বলিল “হে রাত্রি ও দিনের ঠাকুর ! তোমাদের অগোচর কিছুই নাই। জয়চন্দ্ৰ ভিন্ন আমি কাহারও গলে মালা দিব না, আমায় আশীৰ্বাদ কর, যেন আমার মনের বাসনা পূর্ণ হয়।” কিন্তু মনে মনে যাহাই প্রার্থনা করুক, জয়চন্দ্রের পত্ৰখানি পাওয়ার পর হইতে তাহার হৃদয়ে একটা দারুণ লজ্জার ভাব আসিল । সে আর ফুল তুলিতে পুকুরের ঘাটের উদ্যানে যাইতে পারিল না ; তাহার দ্বিধাকম্পিত পদদ্বয় ঘরের বাহির হইতে কুণ্ঠা বোধ করিতে লাগিল। সে লজ্জায় আর চক্ষু মেলিয়া সরল দৃষ্টিতে এদিক ওদিক চাহিতে পারে নাকি জানি পাছে জয়চন্দ্ৰকে দেখিয়া ফেলে। অতিশয় লজ্জা যেন তাহাকে चिड़िशा क्षद्भिन । তদবধি সে পুকুর ঘাটে আর যায় না, বাড়ীর আঙ্গিনার পূর্ব দিকে যে সকল নাগেশ্বর ও চাপা ফোটে তাহাই দিয়া সে পিতার পূজার ব্যবস্থা করে, আর ঘরের পাছে একটা টকটকে লাল জবা ফুলের গাছ আছে, সেই গাছটার অজস্র দানে তাহার তাম্রকুণ্ড পূর্ণ হয়। কিন্তু যদিও একটা কুঁড়ির মত লজ্জাশীল, তথাপি তাহার প্ৰেম গভীর ও আকুতিপূর্ণ। সে মনে মনে বলে “এই যে বাড়ীর মালতি ফুলের গাছটা, ইহারই ফুলে আমি রোজ রোজ মালা গাঁথিয়া তোমার উদ্দেশে তাহা বায়ুর স্রোতে ভাসাইয়া দিব। এই জবা ফুলগুলি ফুটিয়া লাল হইয়া আছে, বাবা যেমন এই ফুল দিয়া শিব পূজা করেন, আমি তেমনই জবা ফুলে তোমাকে পূজা করিব। আর কি সুন্দর ওই মল্লিকা ও কেওয়া ফুল-ইহাদিগকে সাক্ষী করিয়া আমি প্রার্থনা করিতেছি, জন্মে জন্মে যেন জয়চন্দ্ৰকে আমি পতিরূপে পাই ।” আর জয়চন্দ্রের সঙ্গে দিনে একবারও দেখা হয় না । কিন্তু চন্দ্রার মানস-পটে সে জয়চন্দ্ৰকে আঁকিয়া রাখিয়াছে, তাহা মুছিয়া ফেলিবার