পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8S বাংলার পুরনারী ইহার পা ধোয়ার জল লইয়া প্ৰভাতে শয়ন-মন্দিরের কাছে অপেক্ষা করিবে ।” আর একজন প্রৌঢ় বয়স্ক গণক ভ্ৰ কুঞ্চিত করিয়া কন্যার পদাঙ্গুলীগুলি নিরীক্ষণ করিয়া বলিতে লাগিল, “এ কন্যার কখনই দক্ষিণ দেশে বিবাহ হইবে না, ইনি উত্তর দেশের কোন রাজার পাটরাণী হইবেন ; পায়ের আঙ্গুলগুলি পদ্মের কোরকের মত, হাঁটিয়া যাওয়ার সময় ইহার সমস্ত পদতল ভূমি স্পর্শ করে, মাটীর উপর কোন অংশ উচু হইয়া থাকে না,- এই সকল লক্ষণ সুস্পষ্টভাবে প্ৰমান করিতেছে যে, প্ৰতাপশালী কোন রাজার ঘরে ইহার বিবাহ হইবে।” আর এক গণক অতি দাম্ভিক-তিনি বলিলেন, “আপনারা কেন এখানে গণকের হাট বসাইয়াছেন ? জাহাজ একাই যথেষ্ট শক্তি রাখে, ডিঙ্গিনৌকাগুলি তাহার পেছনে রাখিয়া ফল কি ? আমাকে ডাকিলে আর কাহাকেও ডাকার প্রয়োজন হয় না।” গণক কর-কোষ্টী বিচার করিয়া বলিলেন “অতি শীঘ্ৰ ইহার কোন রাজার ঘরে বিবাহ নিশ্চিত, আপনার আমার কথা লিখিয়া রাখুন। চক্ষুর খঞ্জন-গতি, মুখখানি পদ্মের বিলাস, গালে একটু লজ্জায় বা অভিমানে সিন্দুরের মত লোহিতাভা দৃষ্ট হয়। ইহার প্রতিটি অঙ্গ অতি সুলক্ষণ-যুক্ত। রাজার ঘরে ইহার বিবাহ হইবে এবং ইনি সাত ছেলের মা হইবেন।” শেষ যে গণ্যকটি আসিলেন, তিনি বলিলেন-“কন্যার চক্ষুর তারা নিবিড় কাল বর্ণ, ইনি সুখী হইবেন। তবে ইহার সম্প্রতি একটি দোষ দেখা যাইতেছে, জ্যোতিষে ইহাকে “গরদোষ” বলে। গরদের একটি জোড়, থালাতে ঘি, দুধ, চ’ল, মৰ্ত্তমান কলা প্ৰভৃতি সাজাইয়া দ্বাদশটি ব্ৰাহ্মণের প্রত্যেককে ভাল করিয়া ভোজন করান হউক। তারপর কন্যাটিকে তীৰ্থজলে স্নান করাইয়া ব্ৰাহ্মণদের পদ রজঃ মাথায় ধারণ করান হউক । তাহা হইলে ‘গরদোষ” কাটিয়া যাইবে । আজ যদি এই রিষ্টি কাটিয়া যায়, কাল ইহার বিবাহ কে ঠেকাইবে ?”