পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘চমলন্ত জন্ম বন্যা ও দুভিক্ষ মৈমনসিংহে সূত্যা নদীর ধারে আড়ালিয়া গ্রামের নিকটবৰ্ত্তী বকসাই নামক পল্লীতে চান্দ-বিনোদ নামক একটি সুশ্ৰী তরুণ যুবক বাস করিত। তাহার একমাত্র ভগিনীর বিবাহ হইয়া গিয়াছিল, এবং পিতৃবিয়োগের পর অবস্থার বিপৰ্য্যয়ে সামান্য কৃষির উপর নির্ভর করিয়া মাতা ও পুত্ৰ জীবিকা নির্বাহ করিত। সেবার আশ্বিনের ঝড়-বৃষ্টিতে পল্লীগুলি ডুবিয়া গিয়াছিল, ক্ষেত্রের শস্য সমস্তই নষ্ট হইয়াছিল। চাদ-বিনোদ ছিল একজন ভাল কুড়া-শিকারী, তাহা ছাড়া বাড়ী নিৰ্ম্মাণ প্ৰভৃতি স্থপতি-বিদ্যায় সে সুদক্ষ ছিল। ক্ষেতে বসিয়া শস্য-বপন, জল-সেচন ও আগাছা তুলিয়া ক্ষেত নিড়াইতে সে ভালবাসিত না ; এই জন্য মাতা তাহাকে গঞ্জনা করিতেন, তাহার ঘুম ভাঙ্গিতেই অনেক বেলা হইয়া যাইত,—সে কখন ক্ষেতে যাইবে ? সে বৎসর দুৰ্ভিক্ষ ও অজন্মায় লোকের বড় কষ্ট হইল ; কেহ কেহ ঘর বাড়ী বিক্রয় করিল, চ’লের দাম এক টাকায় তিন মণ হইল ; পল্লীতে পল্লীতে হাহাকার পড়িল । দুর্গোৎসবের সময় লোকে তাহদের ছেলে বাধা দিয়া উদরান্নের সংস্থান করিল। চান্দ-বিনোদের মা কোজাগর লক্ষ্মীপূজার দিন প্ৰাতে ঘুম হইতে উঠিয়া দেখিলেন, পূজার জন্য ঘরে এক মুষ্টি চা’লও নাই ; তখন ক্ষেতে যাইয়া কিছু ধান সংগ্ৰহ করিতে পারেন। কিনা, চাদ-বিনোদকে সেই চেষ্টা করিয়া দেখিতে বলিলেন । অনেকক্ষণে তাহার ঘুম ভাঙ্গিল, “পাঁচখানি বেতের ডুগুলঙ্গ হাতেতে করিয়া । মাঠের পানে যায় বিনোদ বারমাসী গাইয়া ৷”

  • ডুগুল = অগ্রভাগ ।