পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

oਟੋ শৈশবাবস্থা সোনাই যে রূপসী হইবে, অতি শৈশব হইতেই তাহা বুঝা গিয়াছিল। বসন্তের হাওয়া মায়ের শেষ হইতে বহে,-সেই স্নিগ্ধ হাওয়া গায় লাগিলেই বুঝা যায়, ঋতুপতি আসিতেছেন, ফাস্তুন-চৈত্র আসন্ন। সোনাই যখন দ্রুত হামাগুড়ি দিয়া মায়ের কোলে উঠে,-চঞ্চল মেয়ে দণ্ডেক কাল একস্থানে থাকিবার নহে, অমনি হাসিতে হাসিতে মাটিতে নামিয়া হামাগুড়ি দেয়তখন মনে হয় কুটিরের আঙ্গিনায় হীরা-মতি লইয়া প্ৰকৃতিদেবী খেলা করিতেছেন। হাসিয়া খেলিয়া সারা আঙ্গিনাময় আছাড় খাইতে খাইতে সে ঘুরিয়া রূপের লহরী বিলাইয়া দেয়। যখন সোনাই সাত বছরে পড়িল, তখন আর অত ছুটাছুটি করিয়া বেড়ায় না। মায়ের কোলে বসিয়া, মায়ের কঁাধে হাত রাখিয়া সে মৃদু মৃদু হাসিতে থাকে, মনে হয় যেন পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় বামুনদের আঙ্গিন ভরিয়া গিয়াছে। আট বছর বয়সে সোনাইএর কেঁকড়ানো কেঁকড়ানো লম্বা “কালো চুল, পদ্মফুলের চারিপাশে শৈবালের মত মুখের চারিদিকে দুলিতে থাকে-কি সুন্দর সেই কালো চাচার কেশপাশ, কি সুন্দর সেই চাপা ফুলের মত মুখখানি ! নবম বৎসরে কন্যা কিশোরী হইয়া উঠিল, তখন দুটাছুটি ও চাঞ্চল্য কমিয়াছে, স্বভাব সংযত ও সুন্দর হইয়াছে, সঁাজের দীপটির মত সোনাই রূপের প্রতিমা হইয়া বসিয়া থাকে, সেই প্ৰদীপের জ্যোতিতে শুধু গৃহখানি নয়, বাড়ীশুদ্ধ সমস্ত স্থান রূপে ঝলমল করিয়া উঠে। এইভাবে দশম ও একাদশ বর্ষ পার হইল। এগারো বছর বয়সে সোনাই তাহার বাপকে হারাইল । সেই পল্লীতে তাহাকে ও তাহার মাকে দেখিবার কেহ রহিল না। বৃক্ষ শুকাইয়া গেলে লতা যেমন পত্রপুষ্প লইয়া আলগা হইয়া পড়ে, লতা মরিয়া গেলে তার ফুল পাতা যেরূপ ঝরিয়া পড়ে, পিতৃহীন গৃহে কন্যা ও মাতার অবস্থা তেমনই হইল।