পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ve বাংলার পুরনারী ঘাটে জল লইতে এবং স্নান করিতে কখন কখনও আসিতেন। সেই সুযোগে দুবৃত্তি বণিকেরা তাহাদের ডিঙ্গা থামাইয়া এই অসহায় অবলাদিগকে তুলিয়া লইয়া যাইত। এই গৃহ-হারা স্বামী-সঙ্গ বঞ্চিতা দেবী-কল্প রমণীরা যে কত বিলাপ করিতে করিতে স্বীয় গ্রাম ছাড়িয়া বল-পূর্বক অপহৃত হইয়া চলিয়া যাইতেন, তাহা এখনও প্ৰাচীন করুণ গীতগুলির সুরে আমাদের কাণে ভাসিয়া আসে। সুতরাং এই লুণ্ঠন শুধু মুসলমানদের দ্বারা হইত না। . দেওয়ান ভাবনা - সেই রমণীর রূপ-লোলুপ দুবৃত্ত, বড় লোকদের একজন ছিলেন, অনেক হিন্দু ও অন্যান্য ধৰ্ম্মাবলম্বী অত্যাচারী যুবকেরা চিরকাল হিন্দু রমণীদের প্রতি এই দুব্যবহার করিয়া আসিয়াছেন। সোনাই বাল্যকাল হইতে রূপের খ্যাতি পাইয়া আসিয়াছিল। তাহার পিতৃবিয়োগের পরে দুঃখে কষ্টে লালিত পালিত হইয়া এই রূপের প্রতিমা সমাজের আদরে বঞ্চিত ছিল না। এই ছোট কাব্যখানি আদ্যন্ত একটি কুসুম-ভূষণ পল্লীর চিত্রের মত। বর্ষাকালের কেয়া ফুলের গন্ধ, কদম্বের শিহরণ এবং দক্ররের কলরবের মধ্যে কুমার মাধব নল খাগড়ার শর লইয়া এক হস্তে পোষা ঘুঘুটি স্থাপন পূর্বক বন বাদাড়ে শিকার করিয়া বেড়াইতেন । , মাধব যখন সোনাইকে দেখিল এবং সোনাই যখন মাধবকে দেখিল, তখনই তাহারা কন্দৰ্প দেবের অর্ঘ্য সাজাইয়া-ৰ্তাহার পূজার মন্দির রচনা করিল। এমন সময় সোনাইএর মামা ভাটুক ঠাকুরের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করিয়া দেওয়ান ভাবনা নদীর ঘাট হইতে লোকজনৰ্বারা সোনাইকে অপহরণ করিতে চেষ্টা পাইল। কিন্তু মাধব তাহাকে উদ্ধার করিয়া নিজগৃহে লইয়া আসিল। কাব্যখানিতে যেন বঙ্গদেশের ষড় ঋতু হাসিতেছে, কোনও সময়ে আম্র মুকুলের গন্ধ, কোনও সময়ে বকুল ও কদম্বের চারিদিকে ভ্ৰমরের সমারোহ, কোথাও বর্ষার ঝরে ঝর ধারা-এই বিচিত্ৰতা-প্ৰাপ্ত মনোরম দৃশ্যাবলির মধ্যে সোনাই মাতুলদত্ত নীলাম্বৱীখানি পড়িয়া নদীর ঘাটে আনাগোনা করিতেছে এবং সখী সাল্লার নিকট তাহার মনের কথাগুলি কহিতেছে, কোনও সময় পদ্ম-দলে প্ৰেম পত্ৰ