পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NOVA বাংলার পুরনারী কোথায় থাকিবে ?-স্থির করিলেন, কঙ্ককে বাড়ী হইতে তাড়াইয়া দিলেই এই কলঙ্কের মোচন হইবে না, তিনি তাহাকে হত্যা করিবেন। তারপরে লীলাকেও সেই পথে প্রেরণ করিয়া নিজে অগ্নিতে আত্ম-বিসর্জন করিয়া প্ৰায়শ্চিত্ত করিবেন । লীলা তাহার মনের ভাব লক্ষ্য করিল, যে মন প্ৰশান্ত এবং নিষ্কম্প দীপ-শিখার ন্যায় ছিল, তাহা যেন ঘূর্ণিপাকে পড়িয়া বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে। র্তাহার বর্ণ বিবৰ্ণ হইয়াছে, চোখের কোণ রক্তিমা জড়িত ও উগ্র, সে পিতাকে কোন দিন এমন দেখে নাই। গৰ্গ দেবমন্দিরের কাছে যাইয়া উন্মত্তের ন্যায় চাহিয়া আছেন, লীলাকে দেখিয়া বলিলেন-“শীঘ্ৰ নদীতে যাও, কলসী ভরিয়া জল লইয়া আইস । দেবতার মস্তকের তুলসীতে কুকুরে মুখ দিয়া বিগ্ৰহ অপবিত্ৰ করিয়াছে। আমি এই মন্দির, শালগ্রাম ও সিংহাসন সমস্ত নদীর জল দিয়া ভাল করিয়া মার্জনা করিব, তুমি শীত্ৰ ख्रव्ल व्लक्षेश उत्रांझेऊन ।।” র্তাহার স্বরে চির অভ্যস্ত স্নেহের একটি বিন্দু নাই, বরং ভাষা কঠোর ও নিৰ্ম্মম-লীলার চোখ দুটি জলে ভরিয়া আসিল । সে কঁাদিতে কঁাদিতে কলসী কক্ষে জল আনিতে গেল। সে ভাবিতে লাগিল, তাহার জগতে কে আছে। পিতা বিরূপ হইলে সে আর কাহার মুখ দেখিয়া মনে শান্তিলাভ করিবে । এমন সময়ে পিতার গুরুগম্ভীর মেঘ গৰ্জনের মত স্বয় শুনিয়া লীলা ঘাটের পথে থমকিয়া দাড়াইল । গৰ্গ বিরক্তি ও ক্ৰোধ মিশ্রিত স্বরে বলিলেন, “তোমাকে আর জল আনিতে হইবে না, আমি নিজে জল লইয়া যাইব, তুমি গৃহে ফিরিয়া যাও।” এই বলিয়া ক্ষিপ্তের মত পাদক্ষেপে গৰ্গ কলসী জলে পূর্ণ করিয়া দেব-মন্দিরে প্রবেশ করিলেন। লীলার হাতের তোলা সমস্ত ফুল মন্দির হইতে কীট দিয়া ফেলিলেন ; তাহার হাতের বেলপাতাগুলি ও ঘসা চন্দন দূর করিয়া ফেলিয়া নিজ হাতের আনা নদীর জলে তাম্রকুণ্ড, সিংহাসন ও শালগ্ৰাম ধুইলেন, মন্দিরটি স্বহস্তে মাৰ্জনা করিলেন, তবুও মন শান্ত হইল না। প্ৰতিদিন যে একাগ্ৰতা লইয়া পূজা করিতে বসেন, সেদিন আর সে একাগ্ৰতা ফিরিয়া পাইলেন না ।