পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vo NSDAD বালক এই কাব্যখানি এমন সুললিত ছন্দে ও অপূর্ব কাব্য কথায় রচনা করিয়াছিলেন যে উহা পল্লীর বালক বৃদ্ধের সকলেরই কণ্ঠে কণ্ঠে আবৃত্তি হইত। সেই বয়সে তিনি গর্গের বাড়ীতে থাকিয়া সুরভি ও পাটলি নামক গাভীদ্বয়কে গোচারণের মাঠে চরাইতেন এবং বঁাশী বাজাইয়া সকলের মনোরঞ্জন করিতেন । সেই বয়সেই-- ‘কািন্ধ আর রাখাল নহে, কবি-কঙ্ক সবে কহে,” সকলে তঁাহাকে কবি কঙ্ক বলিয়া ডাকিত । পীরের আদেশে কঙ্ক আরএকখানি পুস্তক রচনা করেন, তাহার নাম “সত্যপীরের পাঁচালী”-এই পুস্তকের অপর নাম বিদ্যাসুন্দর। বঙ্গদেশে কৃষ্ণ-রামের বিদ্যাসুন্দর, রামপ্ৰসাদের বিদ্যাসুন্দর, ভারত চন্দ্রের বিদ্যাসুন্দর ও প্ৰাণারাম চক্ৰবৰ্ত্তীর বিদ্যাসুন্দর প্রভৃতি পাঁচ ছয়খানি বিদ্যাসুন্দর আছে কিন্তু কবিকঙ্কের বিদ্যাসুন্দরের মত কোনখানিই এত প্ৰাচীন নহে। কঙ্ক চৈতন্যদেবের সমসাময়িক ছিলেন ; সুতরাং প্রায় ৪৫০ বৎসর পূর্বে র্তাহার বিদ্যাসুন্দর রচিত হয়। এই কাব্যের আর একটি বৈশিষ্ট এই যে ইহার উদ্দিষ্ট দেবতা কালিকা দেবী বা অন্নপূর্ণ নহেন। পীরের আদেশে এই পুস্তক রচিত হয় — এবং ইহম্বর উদ্দিষ্ট দেবতা। ‘সত্যপীর’ হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই পূজ্য । পৃথিবীতে যতপ্রকার দুঃখ আছে, শৈশবে কঙ্ক তাহার সমস্তই সহিয়া ছিলেন । বিনা দোষে সামাজিক গ্লানি ও কলঙ্কের ভাজন হইয়া তাহাকে কতই না লাঞ্ছনা সহ্যু করিতে হয়। অবশেষে শত্রু ও ব্রাহ্মণ গোড়াদের ষড়যন্ত্রে পড়িয়া তিনি গৃহ-হারা ও সুখ-শাস্তিহারা হইয়া বনে বনে ও নানা পল্লীতে পৰ্য্যটন করিয়াছিলেন। এই দুঃখের মধ্যে পড়িয়া তঁহার মন পরদুঃখকাতর, দয়ার্ড ও উদার হইয়াছিল। তিনি গর্গকে যেরূপ শ্ৰদ্ধার চুক্সে দেখিতেন মুসলমান পীরকেও তদ্রুপ ভক্তির সহিত দেখিতেন। আহারে বিহারে তঁহার আদৌ গোঁড়ামি ছিল না। যে ব্যক্তি জন্সিয়াই চণ্ডালের অন্নে পালিত, তাহার আবার বৃথা আচার নিষ্ঠার বাড়াবাড়ি থাকিবে কিরূপে ! তিনি চণ্ডাল-জননীকে যেভাবে বন্দনা করিয়াছেন