পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা Ste/o কবিতা বস্তুকে তাহার স্বকীয় গণ্ডী হইতে উৰ্দ্ধে উঠাইয়া তাহাকে আধ্যাত্মিক রাজ্যে পৌঁছিয়া দিয়াছে, কিন্তু পল্লী-গীতিকার মধ্যে সেই আধ্যাত্মিক জগতের ইঙ্গিত নাই। কয়েকটি গীতি যথা ‘আধা বঁধু”, “শ্যাম রায়” “কাজল রেখা।” “কাঞ্চন-মালা” প্ৰভৃতির মধ্যে বাস্তবের সুর খুব উচ্চগ্রামে পৌঁছিয়াছে—তাহা প্ৰায় অধ্যাত্ম-লোকের কাছে গিয়াছে। কিন্তু পল্পীগীতিক অধ্যাত্ম-জগতের কথা নহে, তাহা বাস্তুব-জগতের কথা, বাংলায় সহজিয়ারা যুগ যুগ ধরিয়া প্রেমের তপস্যা করিয়াছিল, সতীরা স্বামীর চিতায় প্ৰসন্ন চিত্তে পুড়িয়া মরিয়াছে, এই গীতিকাগুলিতেও পাঠক দেখিতে পাইবেন, এদেশের রমণীরা প্রেমের জন্য এমন কোন বিপদ ও ত্যাগ নাই, যাহার সম্মুখীন হন নাই। এইভাবে এদেশে প্ৰেম এবং কোমলভাব-সম্পদের অনেক কথা মেয়েদের মুখে মুখে চলিয়া আসিয়াছিল, বৈষ্ণব মহাজন ও পল্লী-গীতিকার উভয়ে সেই কথিত ভাষায় মুখে মুখে প্ৰচলিত অক্ষয় অভিধান হইতে শব্দ চয়ন করিয়াছেন, সেই জন্যই তাঁহাদের পূর্ব-কথিত সাদৃশ্য— ইহা একের নিকট অপরের ঋণ নহে। সময় সময় চণ্ডীদাসের পদ এবং প্ৰাচীন পল্লী-কবির পদ প্ৰায় অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়া যায়, যথা বৈষ্ণব কবির “ঢল ঢল। কঁচা অঙ্গের লাবণী, অবনী বহিয়া যায়” ছত্রের সঙ্গে সোনাই গীতিকার “অঙ্গের লাবণী গো সোনাইর বাইয়া পড়ে ভূমে", এইরূপ সাদৃশ্য অনেকগুলি চক্ষে পড়িবে, মনে হইবে যেন আমরা বাস্তব রাজ্য ছাড়িয়া বৈষ্ণব জগতে আসিয়া পড়িলাম। কিন্তু পল্লী-কবির বাস্তবতা খুব উচ্চস্তর স্পৰ্শ করিলেও তাহা অধ্যাত্ম-রাজ্যে পৌঁছে নাই। মহাজনেরা ও পল্পী কবিরা উভয়েই বাংলার দেশজ শব্দের ভাণ্ডার লুটিয়াছেন, কেহ কাহারও ঋণ গ্ৰহণ করেন নাই। কিন্তু সপ্তদশ শতাব্দী হইতে উনবিংশ শতাব্দী পৰ্য্যন্ত বঙ্গদেশে কীৰ্ত্তনের খোল এরূপ জোরে বাজিয়া উঠিয়াছিল যে, তাহার প্ৰতিধ্বনি এদেশের সর্বত্র শ্রত হইতেছিল, শেষের দিকে পল্লী-কবিরা হয়ত তদ্বিারা ভাষাক্ষেত্রে কিছু প্ৰভাবান্বিত হইয়া থাকিবেন ; কিন্তু তঁহাদের আদর্শ মনুষ্য-জগতের প্ৰেম ; বাস্তবকে রূপক স্বরূপ ব্যবহার করিয়া তাহারা কোন অধ্যাত্ম-তত্ত্ব প্রচার করেন নাই। শ্যাম রায়, আঁধা বঁধু ও মইষাল বন্ধুর পালায় মধুর ও কোমল কাব্য-পদাবলীর ছড়াছড়ি এবং বঁাশীর সুরের