পাতা:বাংলা বানানের নিয়ম (তৃতীয় সংস্করণ) - কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাংলা বানানের নিয়ম

 গত নভেম্বর মাসে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বানানের নিয়ম-সংকলনের জন্য একটি সমিতি নিযুক্ত করেন। এই সমিতি বিশিষ্ট লেখক ও অধ্যাপকগণের নিকট একটি প্রশ্নপত্র পাঠাইয়া তাঁহাদের অভিমত সংগ্রহ করিয়াছেন। প্রায় দুই শত উত্তর পাওয়া গিয়াছে। কতকগুলি বিষয়ে প্রায় সকল উত্তরদাতাই একমত। কোন কোন স্থলে বহুপ্রচলিত বানান কিঞ্চিৎ বদলাইয়া সরল করিতে কাহারও আপত্তি নাই। আবার কতকগুলি বিষয়ে প্রবল মতভেদ দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমিতি সমস্ত অভিমত বিচার করিয়া বাংলা বানানের যে নিয়ম গ্রহণযোগ্য মনে করিয়াছেন তাহা নিম্নে বর্ণিত হইল।

 বানান যথাসম্ভব সরল ও উচ্চারণসূচক হওয়া বাঞ্ছনীয়, কিন্তু উচ্চারণ বুঝাইবার জন্য অক্ষর বা চিহ্নের বাহুল্য এবং প্রচলিত রীতির অত্যধিক পরিবর্তন উচিত নয়। অতিরিক্ত অক্ষর বা চিহ্ন চালাইলে লাভ যত হইবে তাহার অপেক্ষা লেখক, পাঠক ও মুদ্রাকরের অসুবিধা অধিক হইবে। ভাষাতত্ত্ব-বিষয়ক গ্রন্থে বা শব্দকোষে উচ্চারণ-নির্দেশের জন্য বহু চিহ্নের প্রয়োগ অপরিহার্য, কিন্তু সাধারণ লেখায় তাহা ভারস্বরূপ। প্রচলিত শব্দের উচ্চারণ লোকে অর্থ হইতেই বুঝিয়া লয়। আমাদের ভাষার বহু শব্দের বানানে ও উচ্চারণে মিল নাই, যথা—‘গণ, বন, ঘন; জলখাবার, জলযোগ; আষাঢ়, গাঢ়; সহিত, গণিত; অশ্বতর, হ্রস্বতর; একদা, একটা; অচেনা, অদেখা’। এই প্রকার শব্দের বানান-সংস্কার করিতে কেহই চান না, প্রদেশভেদে উচ্চারণের কিঞ্চিৎ ভেদ হইলেও ক্ষতি হয় না। সুপ্রচলিত শব্দের বানান-সংস্কার যদি করিতে হয় তবে, বানানের জটিলতা না বাড়াইয়া সরলতা-সম্পাদনের চেষ্টাই কর্তব্য।

 নবাগত বা অল্পপরিচিত বিদেশী শব্দ-সম্বন্ধে বিশেষ বিচার আবশ্যক। এই প্রকার শব্দের বাংলা বানান এখনও সর্বজনগৃহীত-রূপে নির্ধারিত হয় নাই, অতএব সাধারণের যথেচ্ছতার উপর নির্ভর না করিয়া বানানের সরল নিয়ম গঠন করা কর্তব্য।

 অসংখ্য সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ বাংলা ভাষার অঙ্গীভূত হইয়া আছে এবং প্রয়োজনমত এইরূপ আরও শব্দ গৃহীত হইতে পারে। এই সকল শব্দের বানান সংস্কৃত ব্যাকরণ অভিধানাদির শাসনে সুনির্দিষ্ট হইয়াছে, সেজন্য তাহাতে হস্তক্ষেপ অবিধেয়।