পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাষার ইঙ্গিত SRA নিঃশব্দ নহে একপ্রকার নিশ্চেষ্ট হইয়াও আছে। একটা নির্দিষ্ট অর্থের পশ্চাতে একটা অনির্দিষ্ট আভাল জুড়িয়া দেওয়া এই শ্রেণীর জোড়াকথার কাজ । ছায়াটা আসল জিনিসের চেয়ে বড়োই হইয়া থাকে। অনির্দিষ্টট নির্দিষ্টের চেয়ে অনেক মস্ত । আকার স্বরটাই বাংলায় বড়োত্বের স্বর লাগাইবার জন্ত আছে । আকার স্বরবর্ণের যোগে ঘুঘঘাষ-এর ঘাষ, তুকতাক-এর তাক, ঘুষ অর্থ ও তুক অর্থকে কল্পনাক্ষেত্রে অনেকখানি বাড়াইয়া দিল অথচ স্পষ্ট কিছুই বলিল না । কিন্তু যেখানে মূলশব্দে আকার আছে সেখানে দোসর শব্দে এ নিয়ম খাটে না, পুনর্বার আকার যোগ করিলে কথাটা দ্বিগুণিত হইয়া পড়ে। কিন্তু দ্বিগুণিত করিলে তাহার অর্থ অন্ত রকম হইয়া যায়। যদি বলি গোল-গোল, তাহাতে হয় একাধিক গোল পদার্থকে বুঝায়, নয় প্রায়-গোল জিনিসকে বুঝায়। কিন্তু গোল-গাল বলিলে গোল আকৃতি বুঝায়, সেইসঙ্গেই পরিপুষ্টত প্রভৃতি আরো কিছু অনির্দিষ্ট ভাব মনে আনিয়া দেয়। এইজন্য এইপ্রকার অনির্দিষ্ট ব্যঞ্জনার স্থলে দ্বিগুণিত করা চলে না, বিকৃতির প্রয়োজন । তাই গোড়ায় যেখানে আকার আছে সেখানে দোসর শব্দে অন্ত স্বরবর্ণের প্রয়োজন ; তাহার দৃষ্টাস্ত, দাগদোগ ডাকডোক বাছবোছ সাজসোজ ছাটছোট চালচোল ধারধোর সাফসোফ । অন্যরকম : কাটাকোটা খাটাখোটা ডাকাডোকা ঢাকাঢোকা ঘাটাৰ্ঘোট ছাট ছোট ঝাড়াঝোড় চাপাচোপা ঠাসাঠোসা কালোকোলে । এইগুলির রূপান্তর : কাটাকুটি ডাকাডুকি ঢাকাঢুকি ঘাটাঘুটি ছাটাছুটি কাড়াকুড়ি ছাড়াছড়ি ঝাড়াবুড়ি ভাজাভুজি তাড়াতুড়ি টানাটুনি চাপাচুপি ঠাসাঠুলি । এইগুলি ক্রিয়াপদ হইতে উৎপন্ন। বিশেষ্যপদ হইতে উৎপন্ন শব্দ ; কাটাকুঁটি ঠাট্টাঠটি ধাক্কাধুকি । শেষোক্ত দৃষ্টান্ত হইতে দেখা যায়, পূর্বে আকার ও পরে ইকার থাকিলে মাঝখানের ওকারটি উচ্চারণের স্থবিধার জন্ত উকাররূপ ধরে। শুদ্ধমাত্র ‘কোটি’ উচ্চারণ সহজ, কিন্তু 'কোটাকোটি’ দ্রুত উচ্চারণের পক্ষে ব্যাঘাতজনক । চাপাচোপি ভাকাডোকি ঘাটাম্বোটি, উচ্চারণের চেষ্টা করিলেই ইহা যাইবে, অথচ, চুপি ভুকি ঘুটি উচ্চারণ কঠিন নহে। । % তাহা হইলে মোটের উপরে দেখা যাইতেছে যে, জোড়া কথাগুলির