পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রত্যুত্তর:পঁহু-প্রসঙ্গ

শ্রীযুক্ত বাবু ক্ষীরােদচন্দ্র রায়চৌধুরী[১]

 মান্যবরেষু

আপনি বলিয়াছেন:

 অপভ্রংশের নিয়ম সকলজাতির মধ্যে সমান নহে, কারণ করে ব্যাবৃত্তি সকলের সমান নহে। দুঃখের বিষয় বাংলার শব্দশাস্ত্র এখনও রচিত হয় নাই।

 এ কথা নিঃসন্দেহ সত্য। এবং এইজন্যই বাংলার কোন্ শব্দটা শব্দশাস্ত্রের কোন্ নিয়মানুসারে বিকার প্রাপ্ত হইয়াছে তাহা নির্ণয় করা কঠিন।

 আপনার মতে:

 শব্দশাস্ত্রের কোনাে সূত্র অনুসারে প্রভু হইতে পঁহু শব্দের ব্যুৎপত্তি করা যায় না।

 কিন্তু যেহেতুক বাংলার শব্দশাস্ত্র এখনাে রচিত হয় নাই, ইহার সূত্র নির্ধারণ করার কোনাে উপায় নাই। অতএব বাংলার আরাে দুই-চারিটা শব্দের সহিত তুলনা করা ছাড়া অন্য পথ দেখিতেছি না।

 বােধ করি আপনার তর্কটা এই যে, মূল শব্দে যেখানে অনুনাসিকের কোনাে সংস্রব নাই, সেখানে অপভ্রংশে অনুনাসিকের প্রয়ােগ শব্দশাস্ত্রের নিয়মবিরুদ্ধ। ‘বন্ধু’ হইতে পঁহু শব্দের উৎপত্তি স্থির করিলে এই সংকট হইতে উদ্ধার পাওয়া যায়।

 কিন্তু শব্দতত্ত্বে সর্বত্র এ নিয়ম খাটে না, তাহার দৃষ্টান্ত দেখাই; যথা, কক্ষ হইতে কাঁকাল, বক্র হইতে বাঁকা, অক্ষি হইতে আঁখি, শস্য হইতে শাঁস, সত্য হইতে সাঁচ্চা। যদি বলেন, পরবর্তী যুক্ত-অক্ষরের পূর্বে চন্দ্রবিন্দু যােগ হইতে পারে কিন্তু অযুক্ত অক্ষরের পূর্বে হয় না, সে কথাও ঠিক নহে। শাবক হইতে ছাঁ, প্রাচীর হইতে পাঁচিল তাহার দৃষ্টান্তস্থল। সাধারণত অপ্রচলিত এবং

  1. প্রশ্নকর্তা। পঁহু,সাধনা, শ্রাবণ ১২৯৯।