পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিহ্নবিভ্রাট
২৮৭

আছে। সব সময়ে প্রত্যেক শব্দ সুনির্দিষ্ট একটিমমাত্র অর্থই যে বহন করে তা নয়। সুতরাং অন্য ভাষায় তার একটিমাত্র প্রতিশব্দ খাড়া করবার চেষ্টা বিপত্তিজনক। ‘ভরসা’ শব্দের একটা ইংরেজি প্রতিশব্দ courage, আর-একটা expectation। আবার কোনাে কোনাে জায়গায় দুটো অর্থই একত্রে মেলে, যেমন—

নিশিদিন ভরসা রাখিস
ওরে মন হবেই হবে।

 এখানে courage বটে hopeও বটে। সুতরাং এটাকে ইংরেজিতে তরজমা করতে হলে ও দুটোর একটাও চলবে না। তখন বলতে হবে—

Keep firm the faith, my heart,
it must come to happen.

 উল্‌টে বাংলায় তরজমা করতে হলে ‘বিশ্বাস’ শব্দের ব্যবহারে কাজ চলে বটে কিন্তু ‘ভরসা’ শব্দের মধ্যে যে একটা তাল ঠোকার আওয়াজ পাওয়া যায় সেটা এখানে থেমে যায়।

 ইংরেজি শব্দের তরজমায় আমাদের দাসভাব প্রকাশ পায়, যখন একই শব্দের একই প্রতিশব্দ খাড়া করি। যথা ‘সিম্প্যাথির’ প্রতিশব্দে সহানুভূতি ব্যবহার। ইংরেজিতে সিম্প্যাথি কোথাও বা হৃদয়গত কোথাও বা বুদ্ধিগত। কিন্তু সহানুভূতি দিয়েই দুই কাজ চালিয়ে নেওয়া কৃপণতাও বটে হাস্যকরতাও বটে। ‘এই প্রস্তাবের সঙ্গে আমার সহানুভূতি আছে’ বললে মানতে হয় যে প্রস্তাবের অনুভূতি আছে। ইংরেজি শব্দটাকে সেলাম করব কিন্তু অতটা দূর পর্যন্ত তার তাঁবেদারি করতে পারব না। আমি বলব ‘তােমার প্রস্তাবের সমর্থন করি’।

 এক কথা থেকে আর-এক কথা উঠে পড়ল। তাতে কী ক্ষতি আছে। যাকে ইংরেজিতে বলে essay, আমরা বলি প্রবন্ধ, তাকে এমনতরাে অবদ্ধ করলে সেটা আরামের হয় বলে আমার ধারণা। নিরামিষ-ভােজীকে গৃহস্থ পরিবেশন করবার সময় ঝােল আর কাঁচকলা দিয়ে মাছটা গােপন করতে চেয়েছিল, হঠাৎ সেটা গড়িয়ে আসবার উপক্রম করতেই তাড়াতাড়ি সেরে নিতে গেল, নিরামিষ পঙ্‌ক্তি-বাসী ব্যাকুল হয়ে বলে উঠল ‘যাে আপসে আতা উসকো আনে দেও।’

 তােমাদের কোনাে কোনাে লেখায় এই রকম আপ্‌সে আনেওয়ালাদের