পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -দ্বিতীয় সংস্করণ.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ہ/| নাই। কিন্তু কোন দিকে তার অভ্যাসের টান এবং কোন দিকে অনুরাগের, সে বিচার পরে হইবে এবং পরে করিবে । এইখানে বলা আবখ্যক চিঠিপত্রে আমি চিরদিন কথ্য ভাষা ব্যবহার করিয়াছি । আমার সতেরো বছর বয়সে লিখিত “য়ুরোপ যাত্রীর পত্রে” এই ভাষা প্রয়োগের প্রমাণ আছে । তা ছাড়া বক্তৃত৷ সভায় আমি চিরদিন প্রাকৃত বাংলা ব্যবহার করি,“শান্তিনিকেতন” গ্রন্থে তাহার উদাহরণ মিলিবে । যা-ই হোক এ সম্বন্ধে আমার মনে যে তর্ক আছে সে এই— বাংলা গদ্য-সাহিত্যের সূত্রপাত হইল বিদেশীর ফরমাসে, এবং তার সূত্ৰধার হইলেন সংস্কৃত পণ্ডিত, বাংলা-ভাষার সঙ্গে র্যাদের ভাস্কর ভাদ্রবৌয়ের সম্বন্ধ । তারা এ ভাষার কখনে মুখদর্শন করেন নাই । এই সজীব ভাষা তাদের কাছে ঘোমটার ভিতরে আড়ষ্ট হইয়াছিল সেইজন্য ইহাকে তারা আমল দিলেন না। র্তারা সংস্কৃত-ব্যাকরণের হাতুড়ি পিটিয়া নিজের হাতে এমন একটা পদার্থ খাড়া করিলেন যাহার কেবল বিধিই আছে কিন্তু গতি নাই । সীতাকে নিৰ্ব্বাসন দিয়া যজ্ঞকৰ্ত্তার ফরমাসে র্তারা সোনার সীতা গড়িলেন। যদি স্বভাবের তাগিদে বাংলা গদ্য-সাহিত্যের স্বষ্টি হইত, তবে এমন গড়াপেটা ভাষা দিয়া তার আরম্ভ হইত না। তবে গোড়ায় তাহা কাচ থাকিত এবং ক্রমে ক্রমে পাকা নিয়মে তার বাধন আট হইয়া উঠিত। প্রাকৃত বাংলা বাড়িয়া উঠিতে উঠিতে প্রয়োজন মতো সংস্কৃত-ভাষার ভাণ্ডার হইতে আপন অভাব দূর করিয়া লইত ।