মানুষ 'সশ্বাস ইব’ অতএব চিত্র বলে তখনি মত প্রকাশ করে যখন তার বায়ু বিষম কুপিত হয়েছে। এখনকার ভারত-শিল্পের সাধনা অনাগত অজ্ঞাত যা তারি সাধন না হয়ে যদি পূর্বগত প্রাচীন ও আগত আধুনিক এবং সম্ভূত শিল্পের আরাধনাই হয় সবার মতে, তবে কলাদেবীর মন্দিরে ঘণ্টাধ্বনি যথেষ্ট উঠবে কিন্তু এক লহমার জন্যেও শিল্পদেবতা সেখানে দেখা দেবেন না; “যস্যামতঃ তস্য মতং যস্য ন বেদ সঃ’। বিদ্যমান যে জগৎ তাকে প্রতিচ্ছবি দ্বারা বিদ্যমান করা মানে পুনরুক্তি দোষে নিজের আর্টকে দুষ্ট করা। বিদ্যমান জগৎ বিদ্যমানই তো রয়েছে, তাকে পুনঃ পুনঃ ছবিতে আবৃত্তি করে ড্রয়িং না হয় মানুষ পেলে, রূপকে চিনতে শিখলে, রংকে ধরতে শিখলে—কিন্তু এতো প্রথম পাঠ। এইখানেই যে ছেলে পড়া শেষ করলে সে কি শিল্পের সবখানি পেলে? অথবা মানুষের চেষ্টা তার কল্পনাতেই রয়ে গেল, অবিদ্যমান অবস্থাতেই মূকের স্বপ্ন দর্শনের মতো হ’ল ছেলেটির দশা! অন্ধের রূপকল্পনার মতো অবিদ্যমানকে বিদ্যমানের মধ্যে ধরতে সক্ষম রইলো সে নির্বাক ও চক্ষুহারা? একে রইলো বাইরে বাঁধা, অন্যে রইলো ভিতরে বাঁধা।
শিল্পকে জানতে হ’লে যেখান থেকে কেবল মতই বার হ’চ্ছে সেই টোলে গেলে আমাদের চলবে না। ঋষি ও কবি এবং যাঁরা মন্ত্রদ্রষ্টা তাঁদের কাছে যেতে হবে চিত্রবিদ্কে। এর উত্তর কবীর দিয়েছেন চমৎকার—
“জিন বহ চিত্র বনাইয়া
সাঁচা সূত্রধারি
কহহী কবীর তে জন ভলে
চিত্র বংত লেহি বিচারি।”
যিনি এই চিত্রের রচয়িতা তিনি সত্য সূত্রধর; সেইজন শ্রেষ্ঠ, যে চিত্রের সহিত চিত্রকরকেও নিলো বিচার করে’।
“বিদ্যমান এই যে জগৎ-চিত্র এর উৎপত্তিস্থান অবিদ্যমানের মধ্যে”,—চিত্রের রহস্য এক কথায় প্রকাশ করলেন ঋষিরা।
ঘটনের মূলে রচনের মূলে শিল্পের মূলে শিল্পী না শাস্ত্র-এ বিষয়ে পরিষ্কার কথা বল্লেন ঋষি—“সর্বে নিমেষা জজ্ঞিরে বিদ্যুতঃ পুরুষাদধি” কল্পনাতীত প্রদীপ্ত পুরুষ, নিমেষে নিমেষে ঘটনা সমস্তের জাতা তিনি।