জোর করে করা আর প্রবৃত্তির সঙ্গে করে চলা—এই দুয়ের পার্থক্য শিল্প-কাজে ইতর-বিশেষ ঘটায়। এক দেয় সত্যকার, শিল্প— আর দেয় মিথ্যাকার শিল্পের ভাণ। একটা হাতে-বোন কাথা, এবং অন্যটা কলে-বোন কথা—একটাতে প্রবৃত্তি নিয়ে কাজ হ’ল, অন্তটিতে কুলির খাটুনি নিয়ে কাষ হ’ল! হাতে-সেলাই কাথা সে কলে-বেন। কাথাকে হার মানালে আর্টের দিক দিয়ে। নকল যা তা যতই কেন আসলের ভাণ করুক কোথাও না কোথাও এমন একটা ফাকি থাকে তার মধ্যে যা থেকে ধরা পড়ে যায় তার জাতির খবর।
প্রবৃত্তি হ’ল মনের এবং তারি অনুসরণ করে মানুষ রকম রকম বৃত্তি বেছে নিতে প্রবৃত্ত হয়। চাণক্যের প্রবৃত্তি নীতিমালার, কালিদাসের প্রবৃত্তি কাব্যকলার অবতারণা করলে জগতে। চাণক্য ও শ্লোকে এবং ছন্দে বল্লেন যা বলবার, কালিদাসও বল্লেন কথা সেই উপায়ে। নীতিকথা সেও রসিয়ে উঠলো কালিদাসের কাছে, আর চাণক্যের কাছে রসের কথা সেও গম্ভীর রকমে নীরস হয়ে উঠলে, কাব্য রইলো না। কবি যে ছন্দ যে ভাষা এবং যে সব মাল-মসলা নিয়ে কায করেন তাই নিয়ে নীতিশিক্ষার গুরুও লিখলেন, কিন্তু সে লেখার স্থান হ’ল ন কাব্যজগতে, নীতি-পুস্তকেই বদ্ধ রইল; যথা—
“ছেলে—দেখ বাবা কাল পাখী বসে ঐ গাছে।
বাবা—রুপে কালো, কিন্তু ওর গুণ ভাল আছে॥”
ছেলের মধ্যে রস আছে, সে কালো পাখা দেখেই ভাবে ভোর, কিন্তু ছেলের বাবার মধ্যে নীতি আছে, তাই সে ফস করে নীতি কথা বল্লে। ছেলের কাছে সব পাখীই সুন্দর, গুণে যে তারতম্য আছে সে ত। জানেই না, বাবার কথায় অবাক হয়ে শুধোলে—“কি গুণ উহার বাবা বল না আমায়।” বাবা কোকিলের সম্বন্ধে শকুনতত্ত্ব থেকে কিছুই বল্লেন না কেবল একটু কবিত্বের ভাণ করলেন—“কোকিলের মিষ্টস্বরে শরীর জুড়ায়।”