বিরাট বিরাট বন্দোবস্ত, হাঁকডাকও বিরাট; কিন্তু সেখানে কল হলো, কারখানা হলো, আকাশ-প্রমাণ সব বাড়ী, যোজন-প্রমাণ সব সেতু আর বাঁধ উঠে বেঁধে ফেল্লে নায়াগ্রা নির্ঝর; কিন্তু সেই আয়োজনের পাহাড় এত উঁচু যে তার ওপারে কোথাও যে শিল্পীর আনন্দের নির্ঝর ঝরছে তা জানাই মুস্কিল হয়েছে তাদের—যারা আয়োজন করলে এত করে শিল্পকে জানতে! একথা আমার এক আমেরিকান বন্ধু জানিয়ে গেছেন—আমি বলছিনে।
আমি যখন আমার মনকে শুধোই—এই এত আয়োজন, এই ছবি, মূর্তির সংগ্রহ, এই লেক্চার হল, শেখবার studio, পড়বার লাইব্রেরি, এর প্রয়োজন কোন্ খানটায়? কেনই বা এসব? মন আমার এক উত্তরই দেয়—হয়তো কোথাও একটি আর্টিষ্ট পরমানন্দের একটি কণা নিয়ে আমাদের মধ্যে বসে আছে, অথবা আসছে, কি আসবে কোনদিন—সুন্দর যে ভাবে এসে অতিথি হয় বিচিত্র রস, বিচিত্র রূপ আর গান নিয়ে, ষড়্ ঋতুর মধ্য দিয়ে—তারি জন্যে এই আয়োজন, এত চেষ্টা।
যুগের পর যুগ ধরে আকাশ ঘনঘটার আয়োজন করেই চল্লো— কবে মেঘের কবি আসবেন তারই আশায়। শতাব্দীর পর শতাব্দী লণ্ডন সহরের উপরে কুহেলিকার মায়াজাল জমা হতেই রইলো—কবে এক হুইস্লার এসে তার মধ্য থেকে আনন্দ পাবেন বলে। পাথর জমা হয়ে রইলো পাহাড়ে পাহাড়ে—এক ফিডিয়াস্, এক মাইলোস্, এক রোঁদাঁ, এক মেণ্ট্রোডিফ ব্রেজেস্কা এমনি জানা এবং দেশের বিদেশের অজানা artistদের জন্য। মোগলবাদশার রত্ন ভাণ্ডারে তিন পুরুষ ধরে জমা হতে লাগলো মণিমাণিক্য সোনারূপা—এক রাজশিল্পীর ময়ূর-সিংহাসন আর তাজের স্বপ্নকে নির্মিতি দেবে বলে। তেমনি যে আমরাও আয়োজন করছি, চেষ্টা করছি, শিল্পের পাঠশালা, শিল্পের হাট, কারুছত্র, কলাভবন—এটা-ওটা বসাচ্ছি সব সেই একটি আর্টিষ্টের একটি রসিকের জন্য—সে হয় তো এসেছে কিম্বা হয়তো আসবে।