কিন্তু প্রতি সন্ধ্যায় আকাশ ভরে যে শাখ ঘণ্টা বাজে তার স্বর-মাধুর্য সম্বন্ধে অনয় মত কারও আছে বলে’ তো বোধ হয় না। গড়ের বাছি গড়ের মাঠে সুন্দর লাগে, মন্দিরের শাখ ঘণ্টা দূরে থেকেই ভাল লাগে। সভাস্থলে বীণা বেণু মন্দির, ঘরের মধ্যে সোনার চুড়ির ঝিন্ ঝিন্ স্থান কাল পাত্রের হিসেবে সুন্দর অসুন্দর ঠেকে। মাঠ ছেড়ে গড়ের বাছি যদি ঘরের মধ্যে ধুমধাম লাগায় তবে সে স্থান কাল পাত্রের হিসেব ডিঙ্গিয়ে চলে ও সেই কারণেই ভারি বিজী ঠেকে কানে। মন্দির যখন নদীর ওপার থেকে আরতির ঝনঝন অনেক খানি বাতাস আলো দিয়ে ধুয়ে পাঠায় এপারে তখনি মুন্দর ঠেকে সেটি। সন্ধ্যা-প্রদীপ সন্ধ্যাতার একজন খুব ঘরের কাছে অন্যজন খুব দূরের কিন্তু সুন্দর হিসেবে দুজনে সমান বলে’ আলোর তীক্ষ্ণতা স্তিমিত করে নিয়ে দুজনেই সুন্দর হ’ল মানুষের চোখে!
দখিন হাওয়া শরতের আলো এ সবের মাধুর্যের পরিমাপ তাপমান যন্ত্রের দ্বারা হয় না, মনের বীণায় এরা আপনার সুন্দর পরশ বুলিয়ে দিয়ে জানায় যখন, তখন বুঝি কতখানি মধুর এবং কতখানি সুন্দর এরা। মানুষের মধ্যে যারা ওস্তাদ নয় তারা নিজের হাতে কাঠের বীণাটায় ঘা দিতে থাকে মাত্র, মনে ঘা দেওয়ার কৌশল জানে না তারা। সৌন্দর্য সম্বন্ধে একটা পরিষ্কার উত্তর মানুষ না পেলে বাহির থেকে, না পেলে তার নিজের ভিতর থেকে, এইজন্তই মনে হয় দেশে দেশে কালে কালে সৌন্দর্যতত্ত্ব নিয়ে মানুষ ক্রমাগত আলোচনা করে চলেছে। পণ্ডিত থেকে অপণ্ডিত সবাই জানে সুন্দর আছে, কিন্তু কার কাছে কেমনটা সুন্দর কেমনটি নয় এর মীমাংসা হ’ল না আজও। স্থান কাল দুই অমুকুল প্রতিকূল হয় সুন্দর সম্বন্ধে—এটা কতকটা স্থির হয়ে গেছে; কিন্তু পাত্র হিসেবে কার চোখে কি যে সুন্দর এর মীমাংসা প্রত্যেকে নিজেরাই করছি। শাখ ঘণ্টা দূর থেকে একটা সময়ে ভালো লাগলো বলে’ কানের কাছে তাকে যদি কেউ টেনে এনে বলে, শোনে কি মুন্দর, তবে তর্কের ঝড় না উঠে যায় না; এ কথা গড়ের বাছি 'ইমামবারার আজান সবারই সম্বন্ধে খাটে। দূরে থাকার দরুণ অনেক জিনিষ মুন্দর ঠেকে, দূরত্ব ঘুচিয়ে কাছে টেনে আনলেই তাদের সব সৌন্দর্য চলে যায়।