পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৫২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

পী হাড়ের রূপটা ছিল একটা ঢিবি যার এপার ওপার দৌড়ে ওঠ নাম যায়, তাতে গাছ ছিল না,ঝরণা ছিল না, পাথর ছিল না-রূপের মরুভূমির মাঝে বালির স্তৃপ, কিংবা একটা বড় গাছের গুড়ি—তার বেশি একটুe নয় ; ছেলের মনে আগের দেখা পাহাড় এবং পরের দেখা পাহাড়ে যে বিষম তফাৎ, ঠিক ততটাই তফাৎ চোখের দেখা থেকে বিচ্ছিন্ন অরূপ আর প্রত্যক্ষবা অপ্রত্যক্ষ হচ্ছে যে রূপ তার মধ্যে। দাড়িপাল্লার বামদিকে রাখে। লিখিয়ের কালি কলম কাগজ রঙ তুলি, বীণা-বঁাশী এবং রূপ-অরূপের জল্পনার ভার, আর দক্ষিণে চাপাও শুধু তার চোখে দেখ রূপের মাধুরীবিন্দুটি,—জল্পনার বাটখার ক্রমেই উঠবে আকাশে, চোখে দেখার বাটখারা ক্রমেই নামবে মাটির দিকে। ভারত-শিল্পে যে সকল দেবদেবী মূর্তি দেখি, যে সব ছবি দেখি, তার সবটাই ধ্যান এবং আধ্যাত্মিকতা এবং অরূপ— এটা আমি এক সময়ে কতবার বলেছি তা মনে নেই কিন্তু তাই বলে’ সেই ভুল আঁকড়ে ধরে থাকা চিরকাল তো সম্ভব হ’ল না—রুপ যে চোখ ভুলিয়ে নিলে মন মাতিয়ে দিলে একথা তো আজ বলতে হচ্ছে। পাহাড়-পর্বত নদী-নিবার অরণ্য-আকাশ রূপের সত্তায় বলীয়ান, টোলের পণ্ডিতের রূপ-অরূপের তর্ক কিংবা বিশেষ কোন ধর্মের ও জাতির আধ্যাত্মিকতা প্রমাণ করতে তারা নেই। বরফের চূড়া দেবীপুরাণের একটা শ্লোকের জন্য বড়, নিরুপম নীল আকাশ কৃষ্ণলীলার পদাবলীর ছাদ পেয়ে যে বড়—তা তো মনে হয় না ! নানা রূপক উপমা অতিক্রম করে বিদ্যমান এই যে সব রূপ রঙ এদের সামনে দাড়িয়ে অস্বীকার করা চলে না যে, রূপ নিজেতে নিজে স্বপ্রতিষ্ঠিত। সেই স্বপ্রতিষ্ঠিত রূপের কথাই যেমন হিমালয়ের শিখরে শিখরে তেমনি সমস্ত ভারত-শিল্পেরও প্রত্যেক অঙ্গে দীপ্তি পাচ্ছে । আমাদের ঋষি চিত্রের ষড়ঙ্গ দিলেন, তার প্রথমেই লেখা হ’ল “রূপভেদাঃ”—বিচিত্র রূপের কথা নিরুপম রূপের কথা । অরূপের কথা সে দর্শনশাস্ত্রের কথা ধর্মশাস্ত্রের বিষয়, স্বপ্রতিষ্ঠিত নিরুপম রূপের কথা হ’ল চিত্রের এবং মূর্তির বিষয়। @ সুনির্দিষ্ট রূপ, সুব্যক্ত সুর এই নিয়ে প্রকৃতি চারিদিকে ঘিরে’ রইলো মানুষকে । অনিদিষ্ট সেও একটি রূপ, যাকে বলি অব্যক্ত তাও একটি সুব্যক্ত সুর নিয়ে বর্তমান হ’ল। এই যে পর্বতের ছবি কুয়াসার